০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৭

ফেসবুকে দুঃসময়ের স্মৃতিচারণ করলেন ফখরুলের মেয়ে শামারুহ মির্জা

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও শামারুহ মির্জা  © সংগৃহীত

মায়ের গুরুতর রোগ শনাক্ত, ঠিক সেই সময়ে বাবাও কারাগারে, সেই সব দিনের কথা জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মেয়ে শামারুহ মির্জা। 

২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগম গুরুতর অসুস্থ। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর তার অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারিত ছিল। তবে অস্ত্রোপচারের আগেই, ৮ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে মির্জা ফখরুলকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন শামারুহ মির্জা।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “ফোনটা আব্বু করেছিল ২০২২-এ, ৫/৬ ডিসেম্বর। আমাকে বলল আম্মুর ডায়াগনসিসের (রোগ শনাক্ত) কথা। আব্বু বলল, ‘চিন্তা কোরো না মা, ১০ তারিখে সার্জারি করা হচ্ছে, তারপর ফেব্রুয়ারিতে কেমো (কেমোথেরাপি) শুরু।’ ৮/৯ তারিখে ভোর ৩টা/৪টার দিকে আম্মু কল করল। আব্বুকে গভীর রাতে ডিবি পুলিশ এসে নিয়ে গেল। পাগলের মতো হয়ে গেলাম।”

২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ছিল। এর আগে বিশেষ অভিযানে নামে পুলিশ। পরে তাদের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

উল্লেখ্য,২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ছিল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। তার আগে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করে। ঢাকায় প্রবেশমুখে করা হয় তল্লাশি। গণহারে গ্রেফতার করা হয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের। ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানের প্রথম চার দিনে ৩ হাজার ৮৯৫ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আর তথ্য দেওয়া হয়নি।

শামারুহ মির্জা লিখেছেন, “ডিসেম্বর মাস। (উড়োজাহাজের) টিকিট পাচ্ছি না। যেটা পেলাম, আকাশচুম্বী দাম। আমার তো যেতেই হবে।
চলে গেলাম ঢাকা। আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে ভীষণ কড়াকড়ি। সুযোগ পেলাম। আব্বুর চোখ ভরা পানি। (ফখরুল বলেন) ‘মা, তুমি দেখো তোমার মায়ের ব্যাপারটা।”

শামারুহ জানান, চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে তার মায়ের অস্ত্রোপচারের তাগিদ দেন। কিন্তু তার মা অস্ত্রোপচার করতে নারাজ। তিনি (শামারুহ) লিখেছেন, ‘আম্মু বলল, “তোমার আব্বুকে ছাড়া [অস্ত্রোপচার] করব না”। অনেক বোঝালাম। রাজি হলো। সেদিন পুরো হাসপাতালে আমরা দুই বোন। ইউনুস ভাই। আর জাহিদ (এ জেড এম জাহিদ হোসেন) চাচা। জাহিদ চাচার কথা কি বলব! নিজের চাচার থেকেও বেশি।’

২০২৩ সালের মার্চে মির্জা ফখরুলসহ তার পরিবারের সবাই রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে চিকিৎতার আগে সিঙ্গাপুরেসকেরা দ্রুত কেমোথেরাপি শুরু করতে পরামর্শ দেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কেমো শেষ হয়। এরপর মির্জা ফখরুল স্ত্রীকে নিয়ে আবার যান সিঙ্গাপুরে। শামারুহ সেখানে যান অস্ট্রেলিয়া থেকে।

সিঙ্গাপুরে মির্জা ফখরুলও সে সময় অুসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের কাছে যান। শামারুহ লিখেছেন, ‘[আব্বুর] অসুখ তো আর কমে না। ডক্টর বলল, স্ট্রেস (মানসিক চাপ নেওয়া) ছাড়েন। তাইলে শরীর ঠিক হবে।’ অন্যদিকে চিকিৎসক রাহাত আরা বেগমকে এক বছর পরে আসার পরামর্শ দেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে মির্জা ফখরুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই ঘটনা উল্লেখ করে শামারুহ লেখেন, ‘আব্বুকে আবার জেলে নিয়ে গেল! আর ভাললাগে না। আমি দেশে গেলাম আবার। তারপরের ঘটনা নিয়ে আরেকটি চ্যাপটার (অধ্যায়) লেখা যাবে।’