শিক্ষার মান ‘আই অ্যাম জিপিএ ফাইভ’ স্তরে নেমে গেছে: শ্বেতপত্র কমিটি
বাংলাদেশে গত দেড় দশকে পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার গুণমান কমেছে। শিক্ষাব্যবস্থা দলীয়করণের ফলে শিক্ষার গুণমান ‘আই অ্যাম জিপিএ ফাইভ’ স্তরে নেমে গেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ভয়াবহ অবস্থার এমন চিত্র সামনে এনেছে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অর্থনীতির পরিস্থিতি নিরূপণে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি।
গত ১ ডিসেম্বর শ্বেতপত্র কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেন। ওই প্রতিবেদনের ২১৬ পৃষ্ঠায় শিক্ষার মানের স্তর বর্ণনা করতে এমন উদাহরণ সামনে আনেন শ্বেতপত্র কমিটি। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অর্থনীতির পরিস্থিতি নিরূপণে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে প্রথম গ্রেড পয়েন্ট মূল্যায়ন (জিপিএ) পদ্ধতি চালু করা হয়, সে সময় সারাদেশে জিপিএ ৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী। আর এসএসসিতে গড় পাসের হার ছিল ৩৫.২২ শতাংশ। কিন্তু ২০২৪ সালে জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৫ জনে এবং গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে শ্বেতপত্র কমিটি উল্লেখ করেন, ‘প্রতি বছর বাংলাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নেয়। এমনই একটি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর, ২০১৬ সালে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি লেখায় ৫ জন শিক্ষার্থীর একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। সেখানে তারা কীভাবে জিপিএ ৫ পেয়েছে তার অনুবাদ এবং বাংলাদেশে সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারে নি। এক সাংবাদিক পাসকৃত এক শিক্ষার্থীকে ‘আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি’ এর ইংরেজি বলতে বললে সে উত্তর দেয়, ‘আই অ্যাম জিপিএ ফাইভ’। দেশে জিপিএ ৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থী বৃদ্ধি এবং উচ্চ পাসের হার সত্ত্বেও আমাদের 'শিক্ষার মানের' আয়না হয়ে উঠেছে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদন।
পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার মান বৈসাদৃশ্য বিবেচনায় শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষকরা জানান, বোর্ড থেকে নির্দেশ ছিল (অনানুষ্ঠানিকভাবে, স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকদের মাধ্যমে) উদারভাবে মার্ক দেয়ার ব্যাপারে। তবে, প্রতিবেদনে, একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত অর্জনকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।