০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:০৩

দেশের ১০ শতাংশ মানুষের কাছে ৮৫ শতাংশ সম্পদ: ড. দেবপ্রিয়

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য   © সংগৃহীত

দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের ১০ শতাংশ মানুষের কাছে ৮৫ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে বছরে বিদেশে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

এর আগে গতকাল (১ ডিসেম্বর) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো কাঠামো। এর উৎস ২০১৮ এর নির্বাচন। পরবর্তী সময়ে যে ভোট হয়েছে সেখানে স্বচ্ছতার জায়গা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতা নষ্ট করা হয়েছে। জাতিসংঘ এখনো মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে কোনো বাধা নেই।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু ও ইসকন ইস্যুতে সরকারের অবস্থান জানা যাবে আজ

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম করা যাবে না। পরবর্তী জাতীয় বাজেট আসার আগে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকার কী কী উদ্যোগ নেবে সেগুলোকে স্পষ্ট করতে হবে। আরও দায়বদ্ধতা আনতে হবে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এই সরকার পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকবে না। তবে অন্তত আগামী দুই বছরের কর্মপরিকল্পনা সামনে থাকতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী ছয় মাস দেশ ও জনগণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েক মাসে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংক খাতে, দ্বিতীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, তৃতীয় বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত। তথ্যপ্রযুক্তি খাত অর্থাৎ আইসিটি খাতেও বড় দুর্নীতি হয়েছে।’

আরও পড়ুন: ‘যুবকরা বেকারত্বের অভিশাপে আত্মহত্যা করবে না এমন বাংলাদেশ চাই’

রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীরা গত সরকারের সময় চোরতন্ত্র কায়েম করেছিল বলে অভিযোগ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এই সমস্যাগুলো প্রকট হয়েছে। এ সময় প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহির ঘাটতি বাড়তে থাকে। এগুলোর সংস্কার জরুরি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে স্থিতিশীলতা দরকার। দ্রব্যমূল্যে স্বস্তি দরকার। সরকারের পক্ষে কয়েক মাসে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাহলে জনগণ সরকারের কর্মসূচি জানতে পারবে। আগামী ৬ মাস দেশ ও জনগণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথাগত গবেষণা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রতিবেদনের নানা দিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন: সব আয়োজন সম্পন্ন করেও আটকে গেল পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ উদ্বোধন

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে আমরা নিজেরা ১৮ বার সভা করেছি। নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ২২ বার সভা করেছি। আমাদের প্রথম সভা ছিল ছাত্রদের সঙ্গে। তাদের সর্বোচ্চ জোর ছিল মানসম্মত শিক্ষার ওপরে। শ্বেতপত্রের পুরো প্রক্রিয়া না বুঝলে এই দলিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে এটি প্রস্তুত হয়েছে।

শ্বেতপত্র কমিটির কমিটির সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি করে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েক প্রজন্মের ঘাড়ে।

কমিটির আরেক সদস্য ড. জাহিদ হাসান বলেন, মধ্য আয়ের ঝুঁকি নয়, মনে হয় ফাঁদে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়ন, নীতি পরামর্শ, জবাবদিহি ব্যবস্থা জরুরি।