চিন্ময়ের গ্রেফতারে শেখ হাসিনা ‘কুমিরের কান্না’ কাঁদছেন: রিজভী
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেফতারের ঘটনায় শেখ হাসিনা কুমিরের কান্না কাঁদছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেখলাম শেখ হাসিনা চিন্ময়কে গ্রেফতারের জন্য অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে মুক্তির দাবি জানিয়েছে। এই গ্রেফতারের ঘটনায় তিনি 'কুমিরের কান্না' কাঁদছেন। চিন্ময় গ্রেফতার হয়েছে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী। মুগ্ধর মতো একটি তারুণ্যদীপ্ত ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে, আবু সাঈদ ও নাফির মতো ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে আর এখন আপনি চিন্ময়কে গ্রেফতারের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তিনি আরো বলেন, দেখলাম চিন্ময়কে মুক্তি দিতে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর স্টেটমেন্ট দিয়েছে। আমি তাদের বলি, এই শেখ হাসিনার পোষ্য সন্তান যুবলীগ-ছাত্রলীগ যখন বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল সেদিন তো আপনারা কোনো স্টেটমেন্ট দেননি। তখন নিশ্চুপ থাকলেন কেন? উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বাঁধগুলো খুলে দিয়ে মুসলিমদের সাথে হিন্দুদের বাড়িগুলোও ভাসিয়ে দিলেন। সেদিন তো তাদের জন্য মায়া-দয়া দেখালেন না। ইসকন নামক এই সংগঠনটি সারাদেশকে তারা অস্থিতিশীল করার জন্য যা যা করা দরকার তাই করে যাচ্ছিল। এই ১৮ কোটি মানুষের দেশে অস্থিতিশীল তৈরি করার চেষ্টা করে আপনারা কিছু করতে পারবেন না।
বাকশালি শাসনকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ই আগস্ট দুনিয়া কাঁপানো একটি বিপ্লব হয়েছে। ৭ই নভেম্বরের যে অন্তর্নিহিত চেতনা তারই আরেকটি রূপ হল ৫ই আগস্ট। ৭ই নভেম্বর হয়েছিল বলে সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রজনতা ৫ই আগস্ট ঘটিয়েছে। আমরা '৭১ সালে ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও নাগরিক স্বাধীনতা ছিল না, কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না এবং এই না থাকার মধ্যে সাবেক মন্ত্রীর পিতা হাতে কুড়াল নিয়ে সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রের বৃক্ষকে কেটে টুকরো টুকরো করে একদল গঠন করলেন, তার নাম বাকশাল। সেই বাকশালের বিষবৃক্ষ উপড়ে দিয়ে সেদিন ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিপাহী আর বাড়ি বাড়ি থেকে জনতা একত্রিত হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছিল। ৭ই নভেম্বরের চেতনা ছিল সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা। স্বাধীনতা রক্ষা করা, আর গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে প্রতিষ্ঠিত করা।
'ওই যে সম্মিলিত স্রোত আর শক্তি কেন এসেছিল? এই দেশকে পরাধীন রাখতে চায় কোনো পরাশক্তি, এই দেশটির উপর মাতব্বরি করতে চায় কোনো শক্তি, এর বিরুদ্ধেই জেগে ওঠে ৭ই নভেম্বর। ৭ই নভেম্বর হচ্ছে আমাদের মুক্তভাবে কথা বলা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আমাদের জাতীয় পতাকাকে আমাদের মৃত্তিকার গভীরে পতপত করে উড়িয়ে দেওয়ায় ৭ই নভেম্বর।
যারা মনে করেছিল তাদের পররাষ্ট্রনীতির অনুকরণ করতে হবে, তাদের অর্থনীতিকে অনুকরণ করতে হবে বাংলাদেশকে, তাদের সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হতে হবে আমাদেরকে, যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা তারা মানেই না।'
'যেখানে ৩০ লক্ষ মানুষ অকাতরে জীবন দিতে পারে, পাকিস্তানের সেই প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, তারা কি আর একটা পরাশক্তির কাছে নিজেদের মাথা নত করবে? দিল্লির কাছ থেকে স্বাধীনতা নিয়ে নিয়ে দিল্লির কাছেই বাংলার মানুষ মাথা নুইয়ে দিবে না।' অ্যাডভোকেট যোগ করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমাদের সংগঠনের ৩৮টি টিম ২১ দশকের সময় উপযোগী ছাত্ররাজনীতি হিসাবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটসহ কীভাবে শিক্ষার্থীরা আগামীতে ভালো করতে পারে এ জন্য কাজ করছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
এসময় 'ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের মহানায়ক জিয়াউর রহমান' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহীর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রফিকুল ইসলাম, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলীসহ আরো অনেকে।