২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫

ভোটার কার্যক্রম প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন পরিকল্পনা জানালো ইসি

জাতীয় পরিচয়পত্র  © সংগৃহীত

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদের পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে ইসি সচিবালয়কে একটি কার্যকর ওয়ার্কিং প্ল্যান তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিগগিরই কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে, যদিও সভার নির্ধারিত দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি।  

ভোটার তালিকা হালনাগাদের আইনকানুন এবং এর কার্যক্রমের পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় নতুন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিস্তারিত উপস্থাপন করে এইসব তথ্য। বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের সম্ভাব্য সময়, জনবল ও ব্যয়ের প্রাথমিক ধারণাপত্র উপস্থাপন করে ইসি সচিবালয়। উপস্থাপিত তথ্যে বলা হয়, এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাত থেকে নয় মাস সময় লাগবে এবং প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে প্রায় ৭৫ হাজার জনবল।  

নতুন এই পরিকল্পনায় ভোটার তালিকার সঠিকতা নিশ্চিত করাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা কিংবা ভুয়া ভোটার থাকার যে অভিযোগ রয়েছে, তা যাচাইয়ের ওপর জোর দিয়েছে কমিশন।  

বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা আরও উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগ ভোটারদের মধ্যে আস্থা বাড়াবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ পুনঃস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নির্বাচন কমিশনের এই পরিকল্পনা নিয়ে শিগগিরই আরও বিস্তারিত ঘোষণা করা হবে বলে জানায় ইসি সচিব

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ গণমাধ্যমকে জানান, প্রতি বছর ১ জানুয়ারিতে যারা ১৮ বছর পূর্ণ করে, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এজন্য ২ জানুয়ারিতে ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হয়। কেউ খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হলে আবেদন করে যোগ্যতার ভিত্তিতে তালিকায় যুক্ত হতে পারেন। এই প্রক্রিয়া ২ মার্চের মধ্যে শেষ করতে হয়।  

তিনি আরও জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হলে কী ধরনের প্রস্তুতি লাগবে, তা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পাশাপাশি একাধিক বছরের তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনাও বিবেচনায় রয়েছে।  

বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম চালাতে হলে প্রয়োজনীয় বাজেট, জনবল, ও লজিস্টিক সাপোর্টের বিস্তারিত পরিকল্পনা কমিশনকে উপস্থাপন করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব জানান, আইন অনুযায়ী ১ বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হলেও এবার ২ বা ৩ বছরের তথ্য একত্রে নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।  

বিগত সময়ের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন বরাবরই বলছে, সবার জন্য অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আর তার প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা। এবারও শুদ্ধ তালিকা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

২০০৭-০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা এখনো চালু রয়েছে। ২০২২ সালের হালনাগাদে ৯.৮ শতাংশ তথ্য সংগ্রহ এবং ৮.৭৯ শতাংশ নিবন্ধন করা হয়েছিল। ওই সময় তিন বছরের তথ্য একত্রে নেওয়া হয়েছিল, যা এবারও করার পরিকল্পনা রয়েছে। সবশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদ অনুযায়ী দেশে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। যা প্রায় ১৭ কোটি মোট জনসংখ্যার ৭১.৭৪ শতাংশ।

নির্বাচন কমিশন আগামী দিনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম চালানো ও ভোটার তালিকার শুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য যে প্রস্তুতি নিয়েছে, তা কার্যকর হলে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও মজবুত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।