২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:০৮

রোহিঙ্গা নেতৃত্ব গড়ে উঠতে দেওয়া উচিত ছিল: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা নেতৃত্ব গড়ে উঠতে দেওয়া উচিত ছিল কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি। আমরা চাইলেই একটা সুস্থ নেতৃত্ব গড়ে তোলার সুযোগ দিতে পারতাম। যেটুকু নেতৃত্ব যে গড়ে উঠেছিল তারও নিরাপত্তা দিতে পারিনি। 

শনিবার (২৩ নভেম্বর) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) এর আয়োজনে “বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের দিকে অগ্রসর হওয়া” সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। 

সংলাপে কথা বলছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন । ছবি: ‍টিডিসি

তিনি বলেন, একটা নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারলে ভেতরে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো। তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ থাকতো এবং অনেক বিষয়েই একমত হওয়া যেত। এটা করিনি বলেই বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে অপরাধীদের দ্বারা। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে দেশীয় অপরাধীদের চক্র। তবে এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি, যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।   

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে বিগত সরকারের চুক্তি অকার্যকর ছিল। একটা দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভুলে যেতে দেয়া যাবে না যে, রোহিঙ্গা এখনো আছে।

আরাকান আর্মির প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, রাখাইন রাজ্যে অবশ্যই আরাকান আর্মি হবে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। সেখানের যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আরাকান আর্মির সাহায্য নিতেই হবে। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা জরুরি, তাদের উপেক্ষা করে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই।  

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন যেন মিয়ানমারের জন্য লাভজনক হয় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করতে হবে আর তারা তা না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন যেন মিয়ানমারের জন্য লাভজনক হয় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে মিয়ানমার তাদেরকে খুশি মনে মেনে নেয়।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো যাথে তাদের স্বার্থ রক্ষা করে এ ইস্যুতে আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয়রা যাতে অবহেলিত না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী । ছবি: টিডিসি

এ সময় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী এসআইপিজি আয়োজিত জাতীয় সংলাপে চলমান রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই সংলাপ অন্তর্বর্তীকালীন শাসনের জন্য একটি মূল্যবান দিকনির্দেশনা দেবে এবং একটি দূরদর্শী, টেকসই সমাধানে অবদান রাখবে। সংকট নিরসনে কাজ করার সময় তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিকে সরকারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই সংলাপের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় একটি সমন্বিত এবং ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যা দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে।