‘তোরা আমার বুকের ধনরে আইন্না দে’
‘তোরা আমার বুকের ধনরে আইন্না দে। কে আমারে মা কইয়া ডাকব। পোলাডা কোলে উঠতে চাইছিল লই নাই, এক্কেবারে চইলা গেলো পোলাডা আমারে ছাইড়া। আল্লায় আমার বুকের ধনরে কাইরা নিছে। আমি এহন কি নিয়া বাঁচমু। তোরা আমার পোলাডারে ফিরাইয়া আইন্না দে।’
প্রতিবেশী অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে নিখোঁজের দুই দিন পর আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত পুকুরে থেকে চার বছর বয়সী শিশু আবদুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা। মরদেহ উদ্ধারের খবরে মা আছিয়া বেগমের আহাজারিতে গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাবা-মায়ের অন্তহীন কান্নায় কাঁদছে পাড়া-প্রতিবেশীরাও। শিশু সন্তানের মৃতদেহ জড়িয়ে কান্না করতে গিয়ে বারবার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন মা আছিয়া বেগম।
সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক বাবা আমির হোসেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘চার পোলার মধ্যে আমার ছোট্ট পোলা আবদুর রহমান। সেদিন সকালে পোলা ডারে কোলে নিয়া আদর কইরা কামে যাই। কাম থেইক্ক আইসা আর পোলা ডারে পাইলাম না। পোলাডারে কাইরা নিয়া আল্লাহ কী সাজা দিলো আমারে।’
আজ সকালে নিহত শিশুর আবদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে এমন বেদনাময় দৃশ্য দেখা যায়।
আরও পড়ুন: নিখোঁজ শিশু সন্তানকে ফিরে পেতে বাবা-মায়ের আকুতি
গত বৃহস্পতিবার বিকালে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার নুরাবাদ ইউনিয়নের চকবাজার এলাকার প্রতিবেশী অসুস্থ ব্যাক্তিকে দেখতে গিয়ে ওই বাড়ি থেকেই নিখোঁজ হয় শিশু আবদুর রহমান। নিখোঁজ শিশু আবদুর রহমান ওই গ্রামের আমির হোসেন মাঝির ছেলে। এঘটনায় শুক্রবার বিকালে শিশুর বাবা আমির হোসেন মাঝি একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। থানায় সাধারণ ডয়েরির এক দিন পর বসতবাড়ির অদূরের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে মিলল শিশুর মরদেহ।
নিহত আবদুর রহমানের চাচাতো ভাই ইব্রাহিম হোসেন জানান, ঘটনার দিন তার চাচি আছিয়া বেগম ছেলে আবদুর রহমানকে নিয়ে তাদের দুসম্পর্কের আত্মীয় অসুস্থ নজির মাঝিকে দেখতে ওই বাড়িতে যান। তিনি রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আবদুর রহমান ওই বাড়ির অপর শিশুদের সঙ্গে ঘরের বাইরে খেলা করছিলেন। পরে তাকে না দেখে খুঁজতে থাকেন। অনেক খুঁজেও আবদুর রহমানের কোনো সন্ধান পাননি তারা। পরে নিখোঁজের দুই দিন পর তার বসতঘরের অদূরের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে প্রতিবেশী এক ব্যক্তি অজু করতে গিয়ে তার মরদেহ ভাসতে দেখেন। পরে দুলারহাট থানার পুলিশকে খবর দিলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ পুকুর থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেন।
দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ ইফতেখার জানান, পুকুর থেকে নিখোঁজ শিশুর মরদেহ পাওয়ার খবর পেয়ে দুলারহাট থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহত শিশুর পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ দফনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।