রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় আনতে সংশোধন হচ্ছে আইন

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল  © সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য বুধবার (২০ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে বলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল  প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারবে। তারপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এমন ব্যবস্থা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া করা হয়েছে। এ জন্য আজ বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী খসড়া অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

গতকাল মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন : আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা।

এই আইন অনুমোদন হলে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে ও আদালত মনে করলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের লক্ষ্যে রোম স্ট্যাটিউট এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সুপারিশের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অধ্যাদেশটি পাস হলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে।

উপদেষ্টা পরিষদ এটি গ্রহণ করলে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এটি আইনে পরিণত হবে। তারপর প্রক্রিয়াগত কারণে যত দিন লাগে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন অধ্যাদেশ হচ্ছে, সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘দু-একটি দিন অপেক্ষা করেন। আর সংশোধনীটা তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে।

আমাদের প্রস্তাবনায় যেটা আছে, সেখানে আদালতকে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তবে আদালত যদি মনে করেন, তাহলে তারা এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কনসার্ন অথরিটির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’-এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুধীসমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিল। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিল, তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে; যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, নির্বাচন কমিশন আছে..., এগুলোর কথা খসড়ায় উল্লেখ করা নেই। আদালত যদি মনে করেন, শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করবেন শুধু। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে। তবে এটি উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করে, পরিষদ এটি রাখবে কি না বা কী ফর্মে রাখবে। তখন স্পষ্ট হওয়ার জন্য সাংবাদিকরা আবারও জানতে চান, ‘এটি তো রাজনৈতিক দলের বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে?’ জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ’।

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার ভালো একটি নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে অনেক উপদেষ্টা আগের পেশায় ফিরে যেতে চান।’


সর্বশেষ সংবাদ