১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩২

‘আমাদের আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে’

১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে বাধা দিতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থান  © সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা আকস্মিকভাবে ভারতে চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েন। এর মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে দলটির কার্যালয়, নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। ফলে জীবন 'বাঁচাতে' আত্মগোপনে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমাদের আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যেভাবে হামলা ও হত্যা করা শুরু হয়েছিল, তাতে আত্মগোপনে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’

গত তিন মাসে ‘আত্মগোপনে’ থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ কেউ দেশও ছেড়েছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। যেগুলোর বেশির ভাগই হত্যা মামলা।

একইভাবে দলটির অন্য নেতাকর্মীদেরও অসংখ্য মামলায় আসামি করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

‘আমাদের নেত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই আহত-নিহতদের তথ্য সংগ্রহ আমরা শুরু করেছি।’ বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

জুলাই থেকে গত চার মাসে হামলায় দলটির কয়েক শ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ।

৫ অগাস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ছবি

সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাতিল করা হয়েছে ১৫ অগাস্টের শোক দিবস, সংবিধান দিবসসহ জাতীয় আটটি দিবস।

এখন ‘গণহত্যার’ অভিযোগে আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ অন্য নেতাদের বিচার করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। এমনকি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধও করারও দাবি করছেন অনেকে।

এগুলোর সবই ষড়যন্ত্রের অংশ জানিয়ে খালিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে এসব করা হচ্ছে। অতীতেও এমন চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগকে দাবাতে পারেনি, এবারও পারবেন না।’

দায় নিতে চায় না আওয়ামী লীগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে গত জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে বলপ্রয়োগ করেছে এবং তাতে যত মানুষ হতাহত হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসে সেটি নজিরবিহীন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, আন্দোলন চলাকালে তিন সপ্তাহে ৮৫০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই মারা গেছেন গুলিতে।

এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই হাত, পা ও চোখ হারিয়েছেন; পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু হতাহতের এসব ঘটনার পুরো দায় নিতে চায় না আওয়ামী লীগ।

এ ব্যাপারে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলে আসছিলাম যে এই আন্দোলনে একটা তৃতীয় পক্ষ রয়েছে, যাদের গুলিতে সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে।’

পরিকল্পিত যেই ‘ষড়যন্ত্রে’র কথা আওয়ামী লীগ বলছে, সেটির অংশ হিসেবেই এটি কথা হয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

‘সরকারের একজন উপদেষ্টাও তো এই কথা স্বীকার করেছেন যে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল বাংলাদেশের পুলিশ ব্যবহার করে না, অথচ সেই অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছে,’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১২ আগস্ট তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আহত আনসার সদস্যদের বক্তব্য শুনে আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে। পুলিশের ফায়ার (গুলি) কম লাগছে তাদের। সিভিলিয়ান পোশাকে ৭.৬২ রাইফেলের গুলি লেগেছে। ম্যাসিভ ইনভেস্টিগেশন দরকার। এরা কারা? কাদের হাতে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল গেলো?’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম

যদিও অবশ্য পরে তিনি দাবি করেন যে গণমাধ্যমে তাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে, ‘আমি বলেছিলাম, পুলিশের কাছে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল কারা দিয়েছে, এটা প্রথম আমি তদন্ত করবো...এমনকি আমি এ কথাও বলেছিলাম, সিভিলিয়ানদের হাতে আমি এই রাইফেল দেখেছি। দে আর নট পার্ট অব পুলিশ। আমি সেটাও তদন্তের কথা বলেছিলাম।’

তবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকেই ‘তৃতীয় পক্ষের গুলি’ চালানোর বিষয়ে কথা বলে আসছিল আওয়ামী লীগ। তাহলে তখন কেন তাদের দাবি অনুযায়ী ওই ‘পক্ষটি’কে শনাক্ত করা সম্ভব হলো না?

নাছিম বলেন, ‘সেটার কথা অবশ্যই মাথায় ছিল। কিন্তু তখন দেশে যে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, সেটি সামাল দেওয়াকেই সরকার বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল।’

আওয়ামী লীগ এসব কথা বললেও পুলিশ, বিজিবি ও দলটির বন্দুকধারী নেতাকর্মীরা যে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, সেটার অসংখ্য ছবি ও ভিডিও তখনই সামনে এসেছে। এমনকি ‘পুলিশের পোশাক পরে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে’ এমন বক্তব্যও তখন এসেছে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের মুখ থেকে।

‘এ রকম ঘটনা যে একেবারেই ঘটেনি, সেটা তো আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটনাগুলোর তদন্তও তো আমরা শুরু করেছিলাম। সেগুলোর তদন্ত শেষ করলেই কার কতটুকু দায়, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সূত্র: বিবিসি বাংলা