নতুন ভোটার নিবন্ধনে ধীরগতি নিরসনে যে পদক্ষেপ নিচ্ছে ইসি
জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি পেতে সময় লাগছে নতুন ভোটারদের। তথ্য-উপাত্ত অনলাইনে আপলোড করলে সময় লাগছে সাত দিন থেকে ১৫ দিন। এমনকি কখনও মাসও পেরিয়ে যায়। আর এতে ভোগান্তিতে পড়ছে জরুরি এনআইডি কার্ডপ্রত্যাশীরা। তবে এর অবসান ঘটিয়ে নতুন ভোটারদের জন্য আশার আলো নিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। এ তালিকায় পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন, মহিলা ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৩৭ জন। যদিও ২০২৩ সালের হালনাগাদে প্রায় ৫৮ লাখের বেশি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে।
ইসি বলছে, চলমান ভোটার হালনাগাদের কারণে সার্ভার জটিলতায় সময় বেশি লাগছে। সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখের ও বেশি নতুন আবেদন জমা পড়ছে। সার্ভার ক্রটি ও কিছু জটিলতায় ভোটার আইডি কার্ড পেতে সময় লাগছে।
এদিকে, ২০২৩ সালের হালনাগাদে আগামী তিন বছরের মধ্যে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য (১৮ বছর) হবেন, এবার তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সে হিসাবে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, এই হালনাগাদ কার্যক্রমে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া যাদের জন্ম ২০০৫ সালের আগে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে ভোটার হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি, তারাও হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার হতে পারবেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে মৃত ভোটারের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। এ সময় ভোটার স্থানান্তরের আবেদনও করা যাবে।
অন্যদিকে যে-সব এলাকায় হালনাগাদ শুরু হয়নি কিংবা যাদের জরুরি এনআইডি প্রয়োজন তারা অনলাইনে আবেদন করে থানা নির্বাচন অফিস থেকে ভোটার হচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে আগের তুলনায় অনেক ধীরগতি ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নতুন ভোটার আবেদনকারীদের।
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার সদ্য ভোটার হওয়া শারমিন আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য আমার জরুরি পাসপোর্ট করতে হবে। কিন্তু এনআইডি ছাড়া পাসপোর্ট করা সম্ভব নয়। তাই জরুরি এনআইডির দরকার হয়ে পড়ে। আমি গত ২০ অক্টোবর সব কাগজপত্র নিয়ে নোয়াখালী বেগমগঞ্জ থানা নির্বাচন অফিসে যাই। আমার কাগজপত্রগুলো জমা নিলেও এখনো ছবি তোলার জন্য এসএমএস আসেনি।
যদিও অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উপজেলার নির্বাচন কমিশনার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, আমাদের উপজেলাটি সবচেয়ে বড় এবং লোকবল অন্য উপজেলার মতই সমান। তাই কাজ করতে একটু সময় লাগে। তারপরও আমি চেষ্টা করি যতদ্রুত সম্ভব নতুন আইডির এসএমএস পাঠানো যায়। তিনি আরও বলেন প্রতিদিন আমাদের নতুন আইডি নিবন্ধনের ছবি তোলার কার্যক্রম চলছে।
মো. রিপন নামে একজন বলেন, আমার দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নেওয়া হয়। সেদিনই এগুলো আবার অনলাইনে আপলোড করা হয়েছিল। কিন্তু মেসেজ পেতে দশ দিন সময় লেগেছে। যদিও এর আগে আমার পরিচিত একজন দুই দিনে মেসেজ পেয়েছিল। এবার সময় একটু বেশি লেগেছে।
এ প্রসঙ্গে কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনআইডির জন্য নতুন তথ্য সার্ভারে আপলোড করলে নতুন ভোটারের চোখের আইরিশ ও দশ আঙুলের ছাপ সার্ভারে থাকা অন্য ১১ কোটি এনআইডির সঙ্গে অটোমেটিকভাবে ম্যাচিং হয়। আগে কখনও ফিঙ্গার বা চোখের আইরিশ দেওয়া হয়েছিল কি না এগুলো ম্যাচিং হয়ে তারপর আবেদনকারীর দেওয়া মোবাইল নাম্বারে অটো মেসেজ চলে যায়। সবকিছু অনলাইনে অটো কাজ করছে। এখানে আমাদের হাতে কিছু করার থাকে না।
এদিকে, আঙুলের ছাপ ও ছবি তুলে নিবন্ধনের পর তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য সার্ভারে আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে (ইসি)। গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ইসির এনআইডি শাখার সিস্টেম এনালিস্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেন।
নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন ভোটারদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের পর তিন দিনের মধ্যে তা এনআইডি সিস্টেমের কেন্দ্রীয় সার্ভারে আপলোড করতে হবে। ভোটারের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ ও আপলোডের তারিখগুলো উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে দেখতে পাবেন, এবং এর লগ সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে। নির্দেশ অনুযায়ী যথাযথভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে রাজধানীর একাধিক থানা নির্বাচন অফিস ঘুরে দেখা যায়, অনেকেই নতুন ভোটার হতে এসেছেন। দৈনন্দিন জীবনের সবক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র অত্যাবশ্যকীয় হওয়ায় মানুষের কাছে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
তেজগাঁও নির্বাচন অফিসে নতুন ভোটার হতে আসা হাসিবুল ইসলাম নামে একজন বলেন, সব ধরনের নাগরিক সেবা পেতে এনআইডি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আগে এর ব্যবহার কম থাকলেও বর্তমানে স্কুল-কলেজ কিংবা ব্যাংকিং লেনদেনসহ সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়েছে, তাই এনআইডি করতে এসেছি। এখন এটা আমার খুব দরকার হয়ে পড়েছে। তবে যতদ্রুত এই সেবা নাগরিকদের দেয়া যাবে ততই এর সুফল পাবে বলে আশা করছে বিশ্লেষকরা।