অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘চিটাগাং ক্লাব’ আখ্যা দিলেন উত্তরবঙ্গের সাধারণ ছাত্র-জনতা
উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য করা হচ্ছে অভিযোগ এনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চিটাগাং ক্লাব আখ্যা দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘উত্তরবঙ্গের সাধারণ ছাত্র-জনতা’ এর ব্যানারে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনপর সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭১ সালের সর্বপ্রথম শহীদ কে এবং কোথাকার! উত্তরবঙ্গের। আজকে আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে চিৎকার করছি সেই দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রথম শহীদ কে! আবু সাঈদ। যে তার দুহাত প্রসারিত করে বাংলাদেশের মানচিত্র কে তার বুকের মধ্যে ধারণ করে ঘুমিয়ে গেছেন।
দুইদিন আগে আপনারা (সরকার) যে উপদেষ্টাকে নিয়োগ দিলেন, বিতর্কিত ব্যক্তিদের শপথ পড়ালেন তার ম্যান্ডেট কে দিয়েছে! এমন একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যে বিগত শক্তিশালী করার জন্য তার সর্বোচ্চটা দিয়েছে। আবার আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যার নীতি হলো ব্যবসা। ব্যবসায়ী কখনো রাজনীতিবিদ হতে পারে না। এই সরকার যদি জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোন প্রকারের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এই সরকারকে যেমন ভালবেসে আদর করে বসানো হয়েছে ঠিক তেমনি টেনে নামাতেও আমাদের সময় লাগবে না।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে বলতে হয় আন্দোলনের সময় লেনিনগ্রাদ হয়ে ওঠা আমাদের উত্তরবঙ্গ থেকে কোন উপদেষ্টা দেয়া হয়নি। আমরা বলতে চাই, উত্তরবঙ্গের মানুষ কি শুধু রিকশা চালাবে? উত্তরবঙ্গের মানুষ কি শুধু গার্মেন্টসে কাজ করবে? উত্তরবঙ্গের মানুষ কি শুধু কৃষক হয়ে থাকবে? তাদের সন্তানেরা কি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন না? আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখেন; পাশেই সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, আপনি সেখানে যান। গিয়ে খুঁজুন, চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে কত শতাংশ উত্তরবঙ্গের। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে একজনও উত্তরবঙ্গের নেই। অত্যন্ত লজ্জার কথা, বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাস ঘেটে এরকমটা পাওয়া যায়নি যে উত্তরবঙ্গ থেকে একজনও মন্ত্রী পরিষদে নাই।
আপনি সচিবালয়ে যান, উত্তরবঙ্গ থেকে মাত্র ২ জন সচিব। আমাদের ব্যানার ছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যদি জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া আবারো বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়, যারা বৈষম্য সৃষ্টি করবে, যে সরকারই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে চ্যালেঞ্জ জানাবে আমরা তাদেরকে টেনে নামাব। উপদেষ্টাদের নিয়োগে যারা বাড়াবাড়ি করছে, যারা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে তাদেরকে আমারে স্পষ্ট বলতে চাই, বেশি বাড়াবাড়ি করলে যমুনা সেতু ব্লক করে দেয়া হবে। উত্তরবঙ্গ অচল হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আপনারা আমাদের সে পথে নিতে বাধ্য করবেন না।
এসময় ৩ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো— সুষম উন্নয়ন ও অর্ন্তভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়ণে উত্তরবঙ্গের দুই বিভাগ থেকে কমপক্ষে ২ জন করে ৪ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে; সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমলা ও কর্মকর্তা নিয়োগে আঞ্চলিক বৈষম্য করা যাবে না। সেই সঙ্গে প্রত্যেক উপদেষ্টার কার্যক্রমের অগ্রগতি সাপ্তাহিক জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে; বিতর্কিত ও জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে না, এমন কোন উপদেষ্টাকে অরবর্তীকালীন সরকারে রাখা যাবে না ও পলিসি প্রণয়নে উত্তরবঙ্গের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।