টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলছে অবরোধ, দুর্ভোগ
বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরের মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। টানা তিন দিনের এ অবরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর থেকে টঙ্গী ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে কড্ডা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীরা।
আজ সোমবার সকালে দেখা যায় শ্রমিকদের কেউ রাস্তায় বসে আছেন, কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের অধিকাংশের হাতেই লাঠিসোঁটা। কোনো যানবাহন যাওয়ার চেষ্টা করলেই সেগুলো আটকানোর চেষ্টা করছেন। রাতে যেসব শ্রমিক সড়কে অবস্থান করেছেন, তাদের অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন, আবার নতুন করে মহাসড়কে এসে অবস্থান নিচ্ছেন শ্রমিকদের আরেকটি অংশ। মাইকে তাদের সংঘবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছিলেন কেউ কেউ।
অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। চালকেরা বলছেন, গত তিন দিন এক স্থানে আটকা থাকায় তাদের নানামুখী সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, সংকট নিরসনে তারা কারখানার মালিকের সঙ্গে আলোচনা করছেন।
কারখানা শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড গ্রুপের ছয়টি কারখানার শ্রমিকেরা শনিবার সকাল থেকে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে তাঁরা মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দাবি আদায়ে গত তিন দিন ধরে তারা সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের একটি অংশ রাতেও মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: কাফরুলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৫
খবর পেয়ে কয়েক দফা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে এখনো সড়কে অবস্থান করছেন আন্দোলন করা শ্রমিকেরা।
আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলছেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বরে কারখানা খুললেও আমাদের চার মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন দিতে টালবাহানা করছে। সেজন্য তাঁরা বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। বেতন বকেয়া থাকায় তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
লাগাতার অবরোধ ও বিক্ষোভের কারণে পুরো স্থবির ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িগুলো এক জায়গায় আটকে আছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অবস্থা বেশি খারাপ। অনেকে হেঁটে বা হালকা যানবাহনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বকেয়া বেতন পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা স্থগিত
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, ‘শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের আমাদের ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, শিল্প পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সবাই মিলে কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে টিএনজেড এর শ্রমিক ভাইয়েরা যে অবরোধ করে রেখেছে, আমরা তাদের বারবার বলেছি রাস্তাটা ছেড়ে দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা যে বেতন পাচ্ছে না, এটার দাবিতে তারা অবস্থান নিয়েছে। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি।’
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মালিকপক্ষকে একাধিকার সময় দেওয়া হয়েছিল, ওনারা বারবার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে শ্রমিকেরা এখন আর আমাদের কথা বিশ্বাস করছে না।’