১১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫২

মহানবীকে কটূক্তির জেরে এলাকায় থমথমে অবস্থা, স্বাভাবিক হওয়ার পর রাতে মন্দিরে ভাঙচুর

পাবনার চাটমোহরে দুই মাসের মাথায় আবারও মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় মিছিল বের করে হিন্দু সম্প্রদায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান না খোলার হুশিয়ারি দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার অনুমতিও দেয়া হয়। কিন্তু এরপর রাত (রবিবার) ৮টার দিকে বেশকিছু মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বল্লভপুর এলাকার মন্দিরে হামলা চালায়।

আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন ও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরাতে হিন্দুদের নিয়ে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে'

চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার দত্ত চৈতন্য জানান, উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের কালা সাহার ছেলে প্রশান্ত কুমার সাহা (২৫) গত শনিবার (০৯ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি ঢাকায় থাকেন বলে জানা গেছে। 

এতে ওই এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন বিকেলে ও রাতে মিছিল বের করে হিন্দু সম্প্রদায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান না খোলার হুশিয়ারি দেয়। এরপর থেকে রবিবার (১০ নভেম্বর) সারাদিন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে।

এক পর্যায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার অনুমতিও দেয়া হয়।

এরমধ্যেই রবিবার রাত ৮টার দিকে বেশকিছু মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বল্লভপুর এলাকার মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করে। এতে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে ভাঙচুরের ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে জড়িত সন্দেহে  তিনজনকে আটক করে হান্ডিয়াল পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। 

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হালিম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান শাকিল, সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুল ইসলাম, থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পরে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে তারা। সেইসাথে আটক তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখন বিক্ষুব্ধ জনতা ঘেরাও কর্মসূচি তুলে নিয়ে ফিরে যায়।

এ বিষয়ে চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুল ইসলাম জানান, ঘটনার পরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হলেও তারা জড়িত না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই মন্দির এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম বলেন, মন্দির কর্তৃপক্ষকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মিছিল থেকেই মন্দিরে হামলা হয়েছে, তাই আমাদের সন্দেহভাজন আসামি তারা মিছিলেই থাকবে। মিছিলের ভিডিও ফুটেজে চেহারা দেখে আমরা যাদের শনাক্ত করতে পারবো, তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। 

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পশ্চিমপাড়া ভদ্রা কালীমাতা মন্দিরে তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। সেই ঘটনায় মামলা হলেও আজও ক্লু উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।