০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেভাবে যুক্ত হলেন আসিফ নজরুল

ড. আফিস নজরুল  © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বরাবরই সবর ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আফিস নজরুল। কলাম থেকে টকশো, সব নিয়েই মুখোমুখি হয়েছেন আলোচনা সমালোচনার। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লে শপথ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের সাথে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এই আইন বিশেষজ্ঞ। তবে আন্দোলনে ঠিক কোন মুহূর্তে, কীভাবে যুক্ত হলেন তা নিয়ে ছিল বেশ গুঞ্জন। 

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) আসিফ নজরুল তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন তার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঘটনাবলি। তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল-  

১৬ জুলাই আমাকে ফোন করেন রিয়া আপা (ড. তাসনীম সিদ্দিকী)। আমাকে নাকি গ্রেপ্তার করার জোর গুঞ্জন রয়েছে। তিনি বললেন, রাতে যেন তাঁদের বাসায় গিয়ে থাকি। এর আগে সাইয়েদ আবদুল্লাহ, আইন বিভাগের সহকর্মী সুমাইয়া আপাসহ (সুমাইয়া খায়ের) আরও কেউ কেউ আমাকে সতর্ক করেছিলেন।

তাঁদের আশঙ্কা অমূলক ছিল না। কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ, পুলিশ, উচ্চ আদালত ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আগ্রাসী নীতিতে দেশের পরিস্থিতি দ্রুত বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে উঠছিল। ১৫ জুলাই প্রায় সারা দিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর একতরফা হামলা চালায় ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনী। সেদিনই ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উল্টো অভিযোগ করেন যে আমি ও ফরহাদ মজহার শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। অথচ তখন পর্যন্ত আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়নি কোনো। তবে আমি সোচ্চার ছিলাম পত্রিকায় লিখে (প্রথম আলো ও মানবজমিন) ও টক শোতে (জিল্লুর রহমান ও খালেদ মুহিউদ্দীনের) কথা বলে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে আমার এই ভূমিকা নতুন ছিল না। ২০১৩ সালে প্রথম এ বিষয়ে লিখি, ২০১৮ সালে এই আন্দোলনের সময়ও বারবার এর পক্ষে দাঁড়িয়েছি। তখন গ্রেপ্তার হতে পারি তা জোরালোভাবে কেউ বলেননি, এখন বলছেন কেন! ২০২৪ সালের এই আন্দোলন কি এমনই কোনো ভীতিপ্রদ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের জন্য! 

১৫ তারিখে আমার মন খারাপ ছিল ছাত্রদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়াতে পারিনি বলে। রাতে একাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে। জরুরি বিভাগে রক্তাক্ত হাতপা, মুখ নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তারা। অপারেশন টেবিলে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে কারও। আশপাশে উদ্বিগ্ন বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজন। এই আহত ছাত্রদেরই নাকি পুনরায় হামলার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে প্রবেশের চেষ্টা করেছে ছাত্রলীগ। আনসাররা জানালেন, বাধা দেওয়ার সময় তাঁদের মারধর করা হয়েছে। আক্রমণের ভয়ে অনেককে সরিয়ে ফেলা হয়েছে অন্য চিকিৎসালয়ে। চারদিকে ভীতিকর একটা পরিবেশ। 

হাসপাতালের দোতলায়ও ভর্তি আছে কয়েকজন। তাদের দেখে নিচে নামার সময় প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ হয় নাহিদের সঙ্গে। এমন একটা শান্তসুবোধ চেহারার ছেলে এত বড় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ভাবা যায় না দেখে। হন্তদন্ত হয়ে সে বের হয়ে যাচ্ছিল, আমার জন্য থেমে কথা বলল কিছুক্ষণ। তাকে তাড়া দিচ্ছিল সঙ্গের কয়েকজন। রাতেই নাকি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পরের দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে তারা। 

রাতে বাসায় ফিরে অস্থির লাগছিল। কথা বলি শাহদীন মালিক, বদিউল আলম মজুমদার, মাহবুব মোর্শেদসহ কয়েকজনের সঙ্গে। ফেসবুকে একটা পোস্ট দিই, ছাত্রদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে সমাবেশ, নিদেনপক্ষে একটা বিবৃতি যেন দিতে পারি - এই আহ্বান জানাই।

১৬ তারিখ দিনভর আসতে থাকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের গুন্ডা বাহিনীর রড, ধারালো অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে নির্বিচার হামলার এবং এতে কয়েকজনের মৃত্যুর সংবাদ। ক্ষতবিক্ষত মনে রাতের মধ্যেই বিবৃতি তৈরি করে পত্রিকাগুলোতে পাঠিয়ে দিই। ১১৪ জনের স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে ছাত্রদের হত্যা ও হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়, ছাত্রলীগের পাশাপাশি হুকুমের আসামি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করা হয় এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে সমাজের বহু বিশিষ্ট নাগরিকের অংশগ্রহণ ছিল। এঁদের মধ্যে এমনও ছিলেন, যাঁরা সচরাচর সরকারের বিরুদ্ধে কড়া বিবৃতি দিতে অনীহ থাকেন। সেদিন কেউ আপত্তি করলেন না। তবে বিবৃতি পাঠিয়ে মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল, এভাবে মার খাচ্ছে আমাদের সন্তানেরা! বিবৃতি নয়, আমাদের নামতে হবে রাস্তায়, বিশেষ করে অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকদের।

গভীর রাতে পরদিন ১৭ জুলাই-এ বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক সমাজের ব্যানারে কর্মসূচির বার্তা পাই মেসেঞ্জারে। সেদিন সকাল ১০টার দিকে অধ্যাপক আমানুল্লাহ ফেরদৌস এবং আমিনুল ইসলাম তালুকদারসহ কয়েকজন শিক্ষক ফোন করে জানান, সমাবেশ শুরু হয়েছে। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে দেখি ব্যানার হাতে শিক্ষকেরা দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা ও বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের একটা বিশাল অংশ ছিল সেখানে, ছিলেন সমাজের নানা পেশার মানুষ। একটু দেরিতে হলেও এমন কর্মসূচি হচ্ছে দেখে মনের মধ্যে চেপে থাকা গ্লানিবোধ কিছুটা দূর হলো। এর মধ্যে আন্দোলনে আওয়ামী লীগের গুন্ডা বাহিনীর বেপরোয়া আক্রমণের কিছু ভিডিও আর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমাদের ক্ষোভ আর কষ্ট বহুগুণে বেড়ে যায়। সিদ্ধান্ত হয়, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বসে থাকলে হবে না। সেখান থেকে শাহবাগ মোড় ঘুরে আবার অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এসে সমাবেশ করব আমরা। 

মিছিলের শেষ দিকে আমার সঙ্গে আলতাফ শাহনেওয়াজ ও আরও কয়েকজন ছিলেন। আন্দোলনের অবস্থা নিয়ে কথা বলতে আমরা পিছিয়ে গেলাম কিছুটা। ইতিমধ্যে মিছিল শাহবাগ মোড় ঘুরে এসে থানার সামনে জড়ো হয়েছে। শাহবাগ থানায় ছাত্ররা আটক আছে শুনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু থানার গেট আটকে দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশ। তারা গেট খুলবে না। যা বলার সেখানেই বলতে হবে। অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জোবাইদা নাসরীন আর তানজিমউদ্দিন পুলিশের সঙ্গে তর্ক করলেন। আমি নিজেও বললাম, থানা তো ওসির না, বাংলাদেশের মানুষের। আমরা তাহলে ঢুকতে পারব না কেন! 

থানার গেটের সামনে আমরা সাত-আটজন। পেছনে ব্যানার নিয়ে শ খানেক শিক্ষকের উত্তপ্ত স্লোগান। অবশেষে ফটক খুলে দিল পুলিশ। আমরা সাত-আটজন শিক্ষক থানার ওসির রুমে ঢুকলাম। মানুষের ক্ষোভ আন্দাজ করেই হয়তো বেশি তর্ক করলেন না তিনি। আটক দুজন ছাত্রকে থানাহাজত থেকে নিয়ে আসা হলো ওসির রুমে। একজন এসে আমাকে দেখে বুকে আছড়ে ধরল, ফুঁপিয়ে কাঁদল। সারা রাত কেটেছে ভয়াবহ উৎকণ্ঠায়, শত অনুরোধের পরও কারও সঙ্গে তাদের ফোনে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। তাদের নিয়ে বের হয়ে আসার পর সাংবাদিকেরা আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন। মনে আছে, বলেছিলাম, যারা গুলি করে, খুন করে, তাদের গ্রেপ্তার করে না পুলিশ, গ্রেপ্তার করে আক্রান্ত ছাত্রদের।

থানা থেকে ফিরে এসে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ১৭ জুলাই-এর সমাবেশটা হয় নতুন উদ্যমে। সেখানে এমন কাউকে কাউকে দেখলাম, যাঁরা এর আগে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেননি। বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকও ছিলেন সেখানে। জানা গেল, ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে ক্যাম্পাস খালি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমরা এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলাম। আগুনঝরা বক্তৃতা দিলেন অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, কামরুল হাসান মামুন, বুয়েটের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, জগন্নাথের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নোভা আহমেদসহ অনেকে।

আগের রাতে জ্বর ছিল আমার। ছুটোছুটি আর উত্তেজনায় ঘামে শার্ট লেপটে গেছে শরীরে। কর্মসূচি শেষে বাসায় গিয়ে দেখি, আমার স্ত্রী বসে আছে জায়নামাজে। বলল, তুমি চিন্তা কোরো না, আমি অনেক দোয়া করছি। শার্ট বদলে ওষুধ খেয়ে আবার নামলাম রাস্তায়। দেখি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। সেখানে গিয়ে আরেক দফা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলাম আমরা। সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানালাম, রাগ করে মুহম্মদ জাফর ইকবালের রাজাকার সম্পর্কিত মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করলাম। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা জানাল আগের দুই দিনের নৃশংসতার অনেক কাহিনি। 

ছাত্রনেতা আখতার হোসেন (ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক) আন্দোলনে নিহতদের জন্য গায়েবানা জানাজার আয়োজন করতে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। শোনা গেল, তাকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে পুলিশ। আইন বিভাগের ছাত্র আখতারকে স্নেহ করি বহু আগে থেকে। পুলিশ তাকে কোথায় নিয়ে গেছে খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিছু জানা গেল না। বরং শুনলাম, চারপাশ থেকে পুলিশ আসছে ছাত্রাবাস খালি করার জন্য। মনে হলো দূর থেকে ভেসে আসছে টিয়ার গ্যাস আর গোলাগুলির শব্দ। বাতাসে ধোঁয়ার আভাস, বিকেলের রোদ ম্লান হতে শুরু করেছে, নিশ্চল ক্যাম্পাসে স্তব্ধ হয়ে আছে উঁচু উঁচু গাছের সারি। উপাচার্যের বাসার সামনে থেকে একে একে চলে গেছেন শিক্ষকেরা। ছাত্রদের সংখ্যাও কমছে। ফোন করে আমাকে হুমকি জানাল পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া একজন। সহকর্মী অধ্যাপক মজিবুর রহমান আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন ফুলার রোডের দিকে।

কিছুক্ষণ বুঝতে পারলাম না কী করব এখন। ফুলার রোড পাড়ায় জড়ো হয়ে আছে আমার ফুটবল খেলার সঙ্গী কিশোর-বালকেরা। তারা জানতে চায় কী হচ্ছে এসব। অস্থিরচিত্তে উপাচার্যের বাসায় গেলাম একসময়। ঘর ভর্তি শিক্ষকের মধ্যে অনেকে ছিলেন, যাঁরা এই আন্দোলনসহ নানা সময়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। দেখে মনে হলো না, খুব একটা স্বস্তিতে আছেন তাঁরা। উপাচার্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ করলাম, আখতারসহ অন্যদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে বললাম। তার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো না এই ক্ষমতা আছে তাঁর। 

রাতে বাসায় ফিরে অনেকটা সময় কাটে নানান আশঙ্কার দোলাচলে। কয়েকবার ফোন এল বাসায়। আমার কাছে, আমার স্ত্রীর কাছে। আমাকে বাসায় থাকতে বারণ করা হলো। রিয়া আপা (তাসনীম সিদ্দিকী) যেদিন বলেছিলেন, সেদিন ততটা গুরুত্ব দিইনি। আজও দিতে ইচ্ছে হলো না। কিন্তু আমার স্ত্রী বলল, তুমি চলে যাও, গ্রেপ্তার হলে তো কিছু করতে পারবে না আর। রাত ১১টার দিকে ফুলার রোডের একজন দারোয়ান এসে বাসায় ঢুকে কাঁপতে থাকে। অনেক কষ্টে শান্ত করলাম তাকে। সে জানাল, গতকাল থেকে দারোয়ানদের কাছে খবর নেওয়া হয় আমার। কখন যাচ্ছি, কখন ফিরে আসছি, কারা আসে আমার বাসায়! 

আমার স্ত্রী আর একবিন্দু দেরি করতে দিতে রাজি না। এত রাতে দূরে যাওয়া নিরাপদ নয়, পাড়ার অন্যদিকে থাকা কোনো শিক্ষকের বাসায় গেলে খবর চলে যাবে বিপজ্জনক কারও কাছে। দুজন মিলে ঠিক করলাম, থাকব আমাদের ভবনের ঠিক বিপরীত দিকে, অন্য একটা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তফা মামুনের বাসায়। 

মামুনের পুরো পরিবার অপ্রত্যাশিত অতিথিকে গ্রহণ করল গভীর সহমর্মিতায়। রাতে আর ঘুম আসে না আমার। মামুনের বাসার বারান্দায় গ্রিলের সামনে দাঁড়াই। আমাকে বিদায় দিতে এসে কেঁদেছিল আমার স্ত্রী। পর্দার আড়াল থেকে বাসার বারান্দায় তাকিয়ে খুঁজি তাকে। বারান্দায় ছেলের রুম করা হয়েছে। গ্রিল ঢেকে দেওয়া পর্দায় ছায়া দেখে বুঝি এটা আমার ছেলের মুখ, এটা ছোট্ট মেয়েটার। বাইরে নি:শব্দ বাতাস, আকাশে নিস্তব্ধ অন্ধকার, আড়াআড়িভাবে উড়ছে রহস্যময় একটা ড্রোন!

একটু আগে আবু সাঈদের ভিডিও দেখেছি। দুহাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে সে দাঁড়িয়েছিল স্বৈরাচারের গুলির সামনে। এই আকাশ, এই রাত, এই দেশ আর দেখবে না সে। কিন্তু তার প্রসারিত দুহাত আমাদের বুকের ভেতর থাকবে আগামীকাল, অনন্তকাল।

মনে মনে বলি, যাই ঘটুক, থামব না আমরা আর!