০২ নভেম্বর ২০২৪, ২২:০১

চাটমোহরে ২শ' বছরের রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ, ২২টি পরিবারের দুর্ভোগ

চাটমোহরে ২শ' বছরের রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ  © টিডিসি ফটো

পাবনার চাটমোহরে ২শ’ বছরের পুরোনো একমাত্র পথচলার রাস্তাটি বাঁশ দিয়ে দখল করে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। এতে নদীপাড়ের ২২টি পরিবারের শতাধিক মানুষকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা গ্রামের দক্ষিণপাড়া গ্রামের ওয়াজেদ আলী প্রামাণিকসহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সহায়তা না পেয়ে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। মামলা নং ৬৬৯/২০২৪। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতে দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ প্রামাণিকের বাড়ি থেকে মৃত ইউসুফ প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত ২০০ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট প্রশস্ত রাস্তাটি দুইশ’ বছর ধরে স্থানীয়রা যাতায়াত করেন। রাস্তাটি গুমানী নদী সংলগ্ন কাটেঙ্গা দক্ষিণপাড়া থেকে কাটেঙ্গা বাজারগামী। বাদীসহ ২২টি পরিবারের শতাধিক মানুষ প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাট-বাজার ও পাবনা শহরের চাকুরির সুবাদে যাতায়াত করেন। অসংখ্যবার স্থানীয় সরকারের পক্ষে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাটি ভরাটসহ রাস্তা সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। 

এর মধ্যে গত ২৬ জুলাই একই এলাকার ওয়াজেদ আলী প্রামানিক, আহেদ আলী প্রামানিক, অহেদ আলী প্রামানিক, সবুরা খাতুন, আফরোজ খাতুন, ফরিদা খাতুন ও শামসুন্নাহার জোটবদ্ধ হয়ে তাদের অন্য লোকজনকে সাথে নিয়ে রাস্তাটি দখল করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে আটকে দেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয়রা একাধিকবার সালিশ বৈঠক করলেও তাতে কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। রাস্তার প্রতিবন্ধকতা দুর করতে দখলকারীদের বলতে গেলে তারা বাঁশ খুঁটি না তুলে উলটো বাদীসহ অন্যদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।

মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ প্রামানিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াজেদ প্রামানিক অবৈধভাবে যাতায়াতের রাস্তাটি দখল করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি বাঁশ খুঁটি দিয়ে দখল করে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে মীমাংসার জন্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন বিচার পাইনি। বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি প্রতিবন্ধকতা মুক্ত চাই।’

অন্য ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘আমাদের ২২টি পরিবার কৃষি নির্ভর। মাঠে ফসল ফলাই। আবাদ করি। উৎপাদিত ফসল গরুর গাড়ি, ভ্যান বা পাওয়ার টিলারে করে বাড়ি আনতে হয়। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছি। এই সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি চাই। এ জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পাশাপাশি এই অবৈধ দখলদারের কঠিন শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিলের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, ’এ ধরনের কোন অভিযোগ আমার জানা নেই। আদালতে মামলা হয়েছে কিনা জানি না। আমার কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’

অথচ আগামী ৪ নভেম্বর ঘটনাস্থল সরেজমিনে তদন্তে যাবেন উল্লেখ করে উভয়পক্ষকে সাক্ষ্য প্রমাণাদি নিয়ে উপস্থিত থাকতে  তার স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ জারি করেছেন তিনি। 

এ বিষয়টি তাকে অবহিত করলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিল বলেন, ‘যদি আপনার কাছে আমার স্বাক্ষরিত কোনো নোটিশ থেকে থাকে তাহলে ঠিক আছে। আমি সরেজমিন তদন্তে যাবো।’

অভিযুক্তদের একজন অহেদ আলী প্রামানিক বলেন, ‘আমার বাপ ছিল একলা। এখন আমরা শরিক অনেক। আমাদের বাড়ির জায়গা হচ্ছে না। বাপ থাকতে রাস্তার মধ্যে জমি ফেলে রাখছিল। মানুষের চলাচলের জন্য আমরাও রাস্তা দিয়ে রাখছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের তিন শরিকের বাড়ির জমি প্রয়োজন। তাই যতটুকু দরকার রাস্তার জন্য জমি রেখে বাকিটুকু ঘিরে দিয়েছি। এখানে সরকারি রাস্তা বা সরকারি জমি নাই।’