৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:১০

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও আ.লীগের জায়গা হবে না: ড. ইউনূস

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস  © সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অচিরেই কোনো জায়গা হবে না।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা (রাজনৈতিক) মেকানিজম তৈরি করেছে, তারা নিজ স্বার্থে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেছে।

তিনি বলেন, ‘এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে না সরকার। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ তার বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার রায় ঘোষণার পর ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমি মনে করি না যে, রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে।’

আরও পড়ুন: বিদেশে পাচার হওয়া টাকা পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু : ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সম্ভবত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে, তবে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, কারণ এটি কোনো ‘রাজনৈতিক সরকার নয়’। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতেই নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদেরকেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ করতে হবে।

এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই। সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি। আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।’

আরও পড়ুন: বিশ্বমঞ্চে মাহফুজকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ আখ্যা দিলেন ড. ইউনূস (ভিডিও)

শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর সরকার হাসিনাকে ফেরত চাইবে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার রায় ঘোষণার পর ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমি মনে করি না যে, রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় ৮০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা নিয়ে ভারত যে অভিযোগ করছে তার কোনো সত্যতা নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ‘কিছু ঘটনা’ ঘটেছে এবং ‘খুব অল্প সংখ্যক’ প্রাণহানি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, তাদের ধর্মের ভিত্তিতে নয়, আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি দেখতে চায় বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ

তিনি বলেন, (আগস্টে হামলার শিকার) অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। এটাকে ভিন্ন রূপ দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যেমনটি দুই প্রতিবেশীর থাকা উচিত।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছেন বলে প্রতিনিয়ত অভিযোগ তুলেছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো।