গানে শেখ হাসিনার নাম, ৫ জনকে পুলিশে দিলেন ডিসি
‘যশোর জেলার গুণকীর্তনের’ গানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম থাকায় যশোরে বেগম রোকেয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী নেত্রীসহ পাঁচজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। যশোর জেলা জিমনেসিয়ামে পঞ্চম আন্তর্জাতিক ওপেন কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে যশোর জিমনেসিয়ামে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসক আয়োজকসহ অতিথিদের পুলিশে সোপর্দ করেন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন যশোর জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক বেগম রোকেয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীনেত্রী অর্চনা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সংগঠন শেকড়ের সাধারণ সম্পাদক রওশানা আরা রাসু, বাংলাদেশ সোতোকান কারাতে দো অ্যাসোসিয়েশন (কিউখাই) খুলনা বিভাগের সদস্য সচিব ইমরান হাসান টুটুল, বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন যশোরের সভাপতি হুমায়ন কবির ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। অর্চনা বিশ্বাস নারী অধিকার সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিগত সরকারের আমলে (২০২১) বেগম রোকেয়া পুরস্কারে ভূষিত হন।
আয়োজক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, শুক্রবার যশোর জিমনেশিয়ামে পঞ্চম আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন। সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জয়তী সোসাইটি। চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার টিম অংশ নেয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। দুপুর ১২টার দিকে তিনি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন শেষে যশোর জেলার গুণকীর্তন করে রচিত ‘খেজুর গুড় আর ফুলের মেলা, নকশিকাঁথার যশোর জেলা’ শিরোনামে গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করে শিশুরা। ওই গানে যশোরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কের কথাও রয়েছে। সেই গানের নৃত্য পরিবেশন করায় ক্ষুব্ধ হন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। গান শেষে তিনি আয়োজক ও নৃত্য পরিবেশনকারী শিশুদের আটকের নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে আয়োজকরা তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও জেলা প্রশাসক তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। পরে আয়োজকদের অনুরোধে সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেওয়া শিশুদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন ডিসি।
অর্চনা বিশ্বাস থানায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছাসেবী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জয়তী সোসাইটির পরিচালক। এই অনুষ্ঠানের স্পন্সর ছিল জয়তী সোসাইটি। অনুষ্ঠান কীভাবে হবে, কারা থাকবে, সেটা জানি না। পুলিশ আমাকে ডেকে এনে থানায় বসিয়ে রেখেছে।’
রওশন আরা রাসু বলেন, ‘আমি সাংস্কৃতিক কর্মী। শেকড় নামে আমার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছিল উদ্বোধন পর্বে একটি সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে। সেখানে কয়েকটি নাচের পর্ব থাকবে। তাই আমার সংগঠনের কয়েকজন শিশুদের দিয়ে সেখানে নৃত্য পরিবেশন করে। যশোরের ব্র্যান্ডিং গান হিসেবে পরিচিত ‘খেজুর গুড়ের ফুলের মেলা, নকশিকাঁথার যশোর জেলা’ শিরোনামে গানটিতে নৃত্য পরিবেশন করে তারা। এই গানে যশোরের উন্নয়ন নিয়ে কথা রয়েছে, ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না আমাদের।’
এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, উদ্বোধনের পর খেলা শুরুর আগে নাচের সঙ্গে সাউন্ডবক্সে থিম সং বাজানো হচ্ছিল। ওই সংগীত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কথিত উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে রচিত। আমার কাছে মনে হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করতে এ ঘটনা ঘটানো হতে পারে। তাই সঙ্গে সঙ্গে পাঁচজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে, আসলে তাদের কী লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এখনো অভিযোগ ও মামলা দেয়নি কেউ। ডিসি স্যার সিদ্ধান্ত না দিলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপে যাওয়া যাচ্ছে না।