সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলাচল

পুরোনো সেতু ভেঙে বাঁশের পাটাতন করে দেওয়া হয়েছে
পুরোনো সেতু ভেঙে বাঁশের পাটাতন করে দেওয়া হয়েছে  © টিডিসি

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া বাজার থেকে গোগবাজার সড়কের তেতুলিয়া পর্যন্ত ১৫৬ মিটার চেইনেজে মাত্র ১৬ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডারের একটি সেতু নির্মাণের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পাইল-বোরিং প্রতিবন্ধকতায় এখন পর্যন্ত কাজই শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পুরোনো সেতু ভেঙে বাঁশের পাটাতন করে দেওয়া হলেও কয়েক মাসেই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এটি। এতে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণকে চলাচল করতে হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, নতুন ব্রিজ নির্মাণ করতে গত মে মাসে পুরোনো ব্রিজটি ভেঙে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের জন্য রাজি নদীটির ওপর (এখন সরু খাল) একটি বাঁশের পাটাতন তৈরি করে দেওয়া হয়। সেটিও এখন দেবে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুর উত্তর পাশেই রয়েছে তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাঁশের পাটাতন ভেঙে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে সে আশঙ্কায় আতঙ্কিত থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে তারা।

তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসলিমা, তানজিনা, অনয় ও মোবারক বলে, ‘অনেক দিন ধরে ব্রিজটি ভাঙা। এটির ওপর দিয়ে আমরা জীবনের  ঝুঁকি  নিয়ে স্কুলে এবং বাজারে আসা যাওয়া করি। বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করি। তাই আমরা চাই এই খালের ওপর দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যাতে আমরা ঝুঁকি মুক্তভাবে আসা-যাওয়া করতে পারি।’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন জানান, সাজিউড়া বাজারের এই সড়কে প্রতিদিন অটোরিকশা, ট্রলিসহ বিভিন্ন যানবাহন ও লোকজন চলাচল করেন। ব্রিজের আশপাশের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হয়।এই স্কুলে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮০ জন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্কুল ছাড়াও সাজিউড়া বাজারে এই পাটাতনের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করেন।

তিনি আরও জানান, এই স্কুলের মাঠে সেতু নির্মাণের সামগ্রী দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। তাই শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।

Netrokona Home

বিদ্যালয়ের মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুটি নির্মাণের জন্য এলজিইডি থেকে ২০২৩ সালের গত ২ নভেম্বর সালে নির্মাণকাজ শুরুর কার্যাদেশ তারিখ  এবং ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নির্মাণকাজ সমাপ্তের তারিখ দেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

উপজেলা এলজিইডি সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ২০ মে সেতুর দক্ষিণ পাশে ৬ নম্বর পাইল পয়েন্টে বোরিংয়ের কাজ শুরু করলে ৩ মিটার গভীরে পুরোনো সেতুর বেজে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এক ঘণ্টা চেষ্টার পর বাধা অতিক্রম সম্ভব হলেও ১০ মিটার গভীরে ৩ ঘণ্টা চেষ্টা করেও অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। বোর হোলের অন্য আরও ২টি পয়েন্টে বোরিং করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে ২৮ মে আবার উভয় পাশে সোয়েল টেস্ট করা হলে ৩ মিটারের বেশি অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি।

এলাকাবাসী জানান, পুরোনো সেতুটি করার সময় এর নিচে গাছের বল্লী দ্বারা পাইলিং করা হয়ে ছিল। পরে ১০ মিটার পর্যন্ত বোরিংয়ের সময় গাছের বাঁকল ও গোলাকার পাথর পাওয়া যায়। এ সময় উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা উপস্থিত ছিলেন এবং ওই প্রকল্পের সুপারভিশন প্রকৌশলী এ কে এম রুহুল আলম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। বর্তমানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আল আমিন সরকার বলেন, “সেতুটি নির্মাণের সমস্যাগুলো নিয়ে নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানানোর পর নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার কাজটি বাস্তবায়নে সিদ্ধান্তের পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রকল্প পরিচালক ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্প, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করেন। আশা করছি ব্রিজের কাজটি বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা হবে ‘


সর্বশেষ সংবাদ