জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ে নিহত পুলিশ সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে এ তথ্য পাঠানো হয়। পুলিশ সদস্যদের নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে তালিকাটি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকায় ৪৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে। তালিকায় নিহতদের নাম, পদের নাম, মৃত্যুর তারিখ, সংযুক্ত ইউনিটের নাম এবং ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে।
তালিকা প্রকাশ করে সদর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে, কিছু নিউজ আউটলেট এবং কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা সম্পর্কে মিথ্যা এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। তাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা হলো।’
পুলিশ সদর দপ্তর আরও জানায়, পুলিশ বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যে সকল অফিসার বা কনস্টেবল প্রতিবাদ বা সহিংসতার ঘটনায় আহত বা নিহত হয় তাঁদের তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ করে। যদি কেউ দাবি করেন, গণঅভ্যুত্থানে এই তালিকার বাইরেও পুলিশ নিহতের ঘটনা ঘটেছে সেক্ষেত্রে প্রমাণ সরবরাহের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
নিহতদের মধ্যে তিনজন পরিদর্শক, ১১ জন এসআই, ৭ জন এএসআই, একজন এটিএসআই, একজন নায়েক ও ২১ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
তাদের মধ্যে ডিএমপির ১৪ জন, এনায়েতপুর থানার ১৫ জন, সোনাইমুড়ী থানার ২ জন, তিতাস থানার ২ জন, কচুয়া থানার একজন, বানিয়াচং থানার একজন, ঢাকা এসবির একজন, নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের একজন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের একজন, কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের একজন, কসবা থানার একজন, খুলনা মহানগর পুলিশের একজন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের একজন এবং ঢাকা জেলার ২ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।
সবচেয়ে বেশি, ২৪ জন পুলিশ মারা গেছেন ৫ অগাস্ট, শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার দিন। তার আগের দিন ৪ অগাস্ট মারা গেছেন ১৪ জন। বাকিরা নিহত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।
নিহত তিন পুলিশ পরিদর্শকরা হলেন, মো. আব্দুর রাজ্জাক, রাশেদুল ইসলাম ও মো. মাসুদ পারভেজ ভূইয়া।
নিহত ১১ জন এসআই সদস্য হলেন, সুজন চন্দ্র দে, খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, রেজাউল করিম, মো. মামুনুর রশিদ সরকার, বাছির উদ্দিন, রইস উদ্দিন খান, তহছেনুজ্জামান, প্রণবেশ কুমার বিশ্বাস, মো. নাজমুল হোসাইন, আনিসুর রহমান মোল্লা ও সন্তোষ চৌধুরী। নিহত ৭জন এএসআই হচ্ছেন সঞ্জয় কুমার দাস, ফিরোজ হোসেন, সোহেল রানা, রাজু আহমেদ, ওবায়দুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, মো. মোক্তাদির।
নিহত এএসআইরা হলেন, সঞ্জয় কুমার দাস, ফিরোজ হোসেন, মো. সোহেল রানা, রাজু আহাম্মেদ, মো. ওবায়দুর রহমান, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. মুক্তাদির।
নিহত এটিএসআই হলেন আলী হোসেন চৌধুরী ও নিহত নায়েক মো. গিয়াস উদ্দিন।
নিহত ২১ পুলিশ কনস্টেবল হলেন, মো. আব্দুল মজিদ, রেজাউল করিম, মাহফুজুর রহমান, শাহিদুল আলম, মো. আবু হাসনাত রনি, মীর মোনতাজ আলী, সুমন কুমার ঘরামী, মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. আব্দুস সালেক, মো. হাফিজুল ইসলাম, মো. রবিউল আলীম শাহ, মো. হুমায়ুন কবীর, মো. আরিফুল আযম, মো. রিয়াজুল ইসলাম, মো. শাহিন উদ্দিন, মো. এরশাদ আলী, মাইনুদ্দিন লিটন, মো. সুজন মিয়া, মো. খলিলুর রহমান ও মো. হানিফ আলী।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সক্রিয় সাংবাদিক ও ভ্রমণ-সংগঠক রেদওয়ান খান তার একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “জুলাই আন্দোলনে নিহত পুলিশের তালিকা প্রকাশ হল, ৪৪ জন। এরা সবাই অপরাধী ছিলো, আমি সেটা মানতে নারাজ। দোষীরা সাধারণত আগেই পালায়, মারা যায় নিরীহরা। এমন অনেক পুলিশকে চিনি, চাকরি হারালে তাদের আর কোন উপায় নেই, প্রতিবাদ করার মত সাহসও ছিলোনা। অনেককে সেভ করেছি তখন। পরিস্থিতির কারনে অনেককেই পারিনি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমাদের জীবন যেমন ইনপর্টেন্ট, পুলিশ ভাইদেরও তাই। এমন পরিস্থিতির জন্য মূল দায়ী হুকুমের আসামীরা, তাদের দলীয় রিক্রুটমেন্টগুলো, অতি উৎসাহী সদস্যরা। মাঝ থেকে মারা যাই সাধারন মানুষ, সাধারণ পুলিশ। রাঘোব বোয়ালদের সঠিক বিচারের আসায় রইলাম।”
নিহত পুলিশ সদস্যদের তালিকা নিচে দেয়া হল।