২২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৬

নেত্রকোনায় বন্যায় ৩১৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি 

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আমন ধানের ক্ষেত  © টিডিসি

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় নেত্রকোনার  দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও সদরের জেলা। এতে দুর্ভোগে পড়েন দুই লক্ষাধিক মানুষ। এ ছাড়া রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ধান ও সবজির ক্ষেত, সড়ক ও বাঁধে ব্যাপক ক্ষতি হয়। বন্যার পানি নেমে যেতেই দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর রোপা আমনের ক্ষেত। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩১৫ কোটি টাকার ফসল।

কৃষকরা বলছেন, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর প্রভাব পড়বে বোরো আবাদেও। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জানা যায়, অক্টোবরের শুরুতেই অতিবৃষ্টি ও উজনের পাহাড়ি ঢলে একে একে তলিয়ে যায় দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও সদরের নিম্ন এলাকার ফসলি মাঠগুলো। পানি বাড়তে থাকে উজানের ঢল রূপ নেয় বন্যায়। এতেই কপাল পুড়ে যায় কৃষকদের। তবে এখন বন্যার পানি নেমে গেলেও সবুজে ঘেরা ফসলের মাঠ পাল্টে গেছে পচা স্তূপে।বন্যার পানিতে ধানক্ষেত পুরোপুরি ডুবে থাকায় পচে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে জমির ধান। বেশির ভাগ জমিতেই ধানের শিস আসতে শুরু করলেও সেগুলো আর রক্ষা হয়নি। এমন চিত্র নেত্রকোনার অন্তত পাঁচ উপজেলার।

আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও রয়ে গেছে ক্ষত, জনদুর্ভোগ চরমে

এর মধ্যে চলতি রোপা আমনের উপজেলা দুর্গাপুরে প্রায় ১৬ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আকস্মিক বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল। ফলে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। একই অবস্থা কলমাকান্দা, সদর, পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩১৫ কোটি টাকা। 

কৃষকরা বলছেন, গত ৩০ বছরের এমন বন্যার মুখোমুখি হননি তারা। আগে পাহাড়ি ঢলের পানি জমিতে এলেও সঙ্গে সঙ্গে তা চলে যেত। তবে এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যার কারণে পানি না যাওয়ায় ফসলের মাঠ ডুবে পচে গেছে। এই জমি চাষ করতে অনেকেই ধারদেনা করে ও ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। এবার ফসল নষ্ট হওয়ায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।

চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আকস্মিক বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমি ফসল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৭৫ হাজার ৭০০ কৃষক।

আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় বন্যার্তদের পাশে ৩০তম বিসিএস অ্যাসোসিয়েশন

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি। চলতি রোপা আমনের ধান আবাদ ছাড়াও সবজিতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটি যেহেতু অসময়ে বন্যা, সেহেতু ধানের ক্ষেত্রে এখন আর কৃষকদের কোনো কিছু করার নেই। তারপরও যেসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রয়েছেন তারা যেন তাদের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা যেন বোরো আবাদের আগেই বাড়তি একটি ফসল আবাদ করতে পারে, এ জন্য আমরা তাদের সরিষা আবাদে কথা বলেছি।’

নুরুজ্জামান আরও জানান, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য  সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা আসবে বলে আশা করছি।’