রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করা হলো শিক্ষার্থীদের, পাবেন সম্মানীও
রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রাথমিকভাবে পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে ৩০০ শিক্ষার্থীকে যুক্ত করা হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ডিএমপির ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ উদ্বোধনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত ডিএমপির ট্রাফিক পক্ষের কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে ৩০০ শিক্ষার্থীকে সম্মানীসহ যুক্ত করা হয়েছে। পরে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবার এই ট্রাফিক পক্ষে এবং এরপরেও আমাদের সঙ্গে ছাত্র ভাইয়েরা থাকছেন। প্রথম অবস্থায় প্রায় ৩০০ জন ছাত্র আমাদের এই ট্রাফিক পক্ষে কাজ করবেন। পরে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তাদের আমরা একটা সম্মানী দেব, এ সম্মানীটা এখানে বলতে চাইছি না। একটা রিজনেবল সম্মানী তাদের দেব।
‘এই ছাত্র ভাইয়েরা যদি রাস্তায় থাকে... আপনারা দেখেছেন ৫ আগস্টের পরে তারা রাস্তায় ভালো কাজ করেছে। এখন আমাদের সঙ্গে কাজ করে তারা হয়ত রাস্তার পরিস্থিতিটা কিছুটা উন্নত করতে পারবে।’
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় ২ কোটিরও বেশি মানুষ এ শহরে বসবাস করে। ঢাকায় রাস্তা অপ্রতুল হওয়ায় যানবাহনের ধারণক্ষমতা বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। ঢাকায় যে পরিমাণ রাস্তা থাকা দরকার বাস্তবে তা নেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের ঢাকামুখী কমানো যাচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলেও পরিবহণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও সুশৃঙ্খল উল্লেখযোগ্যভাবে হয়নি। মূল সড়কে জনগণের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে আরামদায়ক যানবাহন উল্লেখযোগ্যভাবে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি একই সড়কে রিকশা ঠেলাগাড়িসহ অসংখ্য অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। মানুষ তার প্রয়োজনে এসব যানবাহনের দ্বারস্থ হচ্ছে। ফলে ঢাকা মহানগরীতে সুশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কঠিনতর হচ্ছে। অপরদিকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন দাবি দাওয়ার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে এবং বৈধ-অবৈধ যানবাহনের আধিক্যের কারণে যানজট দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ‘ফ্যাসিবাদ সরকারের’ পতনের পর ঢাকাসহ সারাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণের কথা বিবেচনা করে ছাত্ররা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সড়কে ট্রাফিক দায়িত্ব পালন করে শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতা, সুশীল সমাজের ব্যক্তিরাসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন তাদের মূল্যবান পরামর্শে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ট্রাফিক বিভাগ বেআইনি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের চেষ্টা স্বত্বেও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন আশানুরূপ হয়নি। ট্রাফিক সিগন্যাল দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে চালুর জন্য একটি গবেষকদল কাজ করছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি চালু হবে।
ট্রাফিক পক্ষ চলাকালে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনবহুল এলাকায় সচেতনতা, মালিক-চালকদের সঙ্গে মতবিনিময়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মতবিনিময় কার্যক্রম চালানো হবে। এসময় তিনি নগরবাসী সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান।
ট্রাফিক পক্ষ উপলক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক চালক, যাত্রী ও পথচারীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ; ট্রাফিক সাইন সম্পর্কে ধারণা প্রদান; সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি; দর্শনীয় স্থানে ব্যানার স্থাপন; ট্রাফিক সচেতনতামূলক ভিডিও প্রদর্শন; শ্রমিক ও বাস মালিক প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজন; রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্লস গাইড, বিএনসিসি সদস্য ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে জনসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।