১৪ কোটি মানুষের বিদ্যুৎ বঞ্চনা নিরসনে চার দাবি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) বিক্ষুদ্ধ কর্মীর চার দফা দাবি জানিয়েছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ১৪ কোটি মানুষের বিদ্যুৎ বঞ্চনা নিরসন, পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি, টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সমিতিতে কর্মরত ৪৫ হাজার জনবলের বৈষম্য ও হয়রানি নিরসন, আত্মমর্যাদা এবং আত্মসম্মানের বিষয়ে টেকসই সমাধানের জন্য এ চার দফা দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সমিতির বিক্ষুদ্ধ কর্মীদের পক্ষ থেকে এ চার দফা দাবি জানানো হয়।
এ দাবিগুলো হল, আরইবি কর্তৃক সৃষ্ট অস্থিতিশীল পল্লী বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে ২৪ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া ও স্ট্যান্ড রিলিজ এবং সংযুক্ত ২ জনকে পদায়ন করা। গ্রাহকের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য সমিতি ও বোর্ড সংস্কার করে একীভূত করে ১ টি প্রতিষ্ঠান করা ও স্থায়ী পদের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিকদের নিয়মিত করা। ছাত্র সমন্বয়কসহ স্বাধীন কমিশন গঠন করে সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা। আরইবির দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনা।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পল্লী বিদ্যুতের সব গ্রাহকসহ দেশের সকল নাগরিকের উদ্দেশ্যে জানাতে চাই, পল্লী বিদ্যুতের সেবা মূলত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে গ্রাহক পর্যায়ে পৌছায়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক সব লাইন নির্মাণ এবং মালামাল ক্রয় ও সরবরাহ করা হয়। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সবচেয়ে বড় কাজ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন সংযোগ প্রদান এবং অভিযোগ সমাধান করে থাকে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, অন্যান্য বিতরণ সংস্থার থেকে অতি নিম্নমানের মালামাল দিয়ে লাইন নির্মাণ এবং নিম্নমানের মিটার, ট্রান্সফরমার, তারসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। যার কারণে আকাশে মেঘ উঠলেই পল্লী বিদ্যুতের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। ঝড় বাদলে খুটি ভেঙে দিনের পর দিন গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। ভুক্তভোগী হয় সাধারণ গ্রাহক এবং গ্রাহক পর্যায়ে থাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তারা আরও বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায়, এই সিস্টেমের সংস্কার দাবি করায়, শহর এবং গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসনের দাবি তোলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে হয়রানী করা হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে গ্রেফতার আতঙ্কে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সবাই নিরাপত্তার জন্য স্টেশন ত্যাগ করলে তখন বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটলে এর দায় কে নেবে?
এতে আরও বলা হয়, গ্রাহকের সাথে সংশ্লিষ্টতা কিংবা জবাবদিহিতা না থাকায় আরইবি কর্তৃক সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক মালামাল ক্রয় করে ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো নির্মাণ করে সমিতির নিকট হস্তান্তর করায় গ্রাহক প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব না হওয়া, ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে সমিতিগুলোকে শোষণ করা, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হেয় প্রতিপন্ন ও হয়রানি করা, আরইবির ব্যর্থতার দায়ভার সমিতিগুলোর উপর চাপানো, আরইবির ইত্যাদি কর্মকাণ্ড দীর্ঘকালে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করায় গত জানুয়ারি থেকে সমিতিগুলোতে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর শুধুমাত্র স্মারকলিপি প্রেরণের জন্য দুইজন এজিএমকে সাসপেন্ড, এবং কয়েকজনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। অথচ যশোর-১ এর জিএম ইসাহাক আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নারী কর্মীদের হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে প্রাইজ পোস্টিং প্রদান করে। গত মে মাসে গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৫ দিন কর্মবিরতি পালন করে। জুলাই মাসেও গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে ১০ দিন কর্মবিরতি পালন করে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংস্কার কমিটি গঠন করা হলেও বোর্ড সেখানে জানায় তারা সংস্কার চায় না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই কোনরকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই গত ১৭ অক্টোবর ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয় এবং ১৮ জনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। যে কারণে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সেবা বিঘ্নিত হয়, যার জন্য আমরা গ্রাহক সাধারণের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী।
এতে বলা হয়, ঝড় বাদলে পল্লী বিদ্যুতের নিম্নমানের মালামালে নির্মিত লাইন বন্ধ হয়ে গেলে যখন তিন-চার-পাঁচ দিনেও কারেন্ট ফিরে আসে না, তখন কি জনদুর্ভোগ হয় না? তখন কি জনগণকে কষ্ট দেয়া হয় না? যদি উত্তর হ্যা হয়, তাহলে এই দুর্ভোগের দায়ী পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে কেনো জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় না? তাদের শক্তির উৎস কোথায়? এরা কি আইন-শাসন-জবাবদিহিতার উর্দ্ধে? পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতির খবর দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দেশের সাধারণ জনগণের পক্ষে বিদ্যুৎ সেবার মান উন্নয়নের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বছরের শুরু থেকে যে আন্দোলন এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। যদি তাই হতো তাহলে বিগত সরকারের সময় এই আন্দোলনের কারণে তাদেরকে সাসপেন্ড, স্ট্যান্ড রিলিজ, বদলি করা হতো না।
সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের সব সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের নিকট আহ্বান জানাই, আপনারা সত্য জানুন। শহর ও গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও উন্নত গ্রাহক সেবার লক্ষ্যে জনগনের পক্ষে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এই আন্দোলন সমর্থন ও সফল করতে আওয়াজ তুলুন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সংস্কার হলে নিশ্চিতভাবে দেশের ১৪ কোটি গ্রাহক উন্নত বিদ্যুৎ সেবা পাবে। সরকারের কাছে বিনীতভাবে জানাতে চাই, প্রকৃত সত্য আড়াল করে কারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনুন। বর্তমান সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আসুন আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর ও বৈষম্যহীন দেশ গড়তে অংশগ্রহণ করি।