১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০:২৩

‘টাকা তো নাই, তাই অপারেশন করাতে পারছি না’

মো. এনামুল হক  © সংগৃহীত

ঘরে খাবার নেই, তার ওপর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিঁধে আছে ১৩টি রাবার বুলেট। পরিবারের ছয় সদস্যের ভরণ-পোষণও তার ঘাড়ে। শারীরিক যন্ত্রণা আর অর্থচিন্তায় দিশেহারা দিনমজুর মো. এনামুল হক (২৫)।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন এনামুল। ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে বুলেটবিদ্ধ হন তিনি। মাথাসহ সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৫০টি রাবার বুলেট বিঁধে যায়। কয়েকবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বেশির ভাগ বুলেট বের করা হলেও এখনো মাথার ভেতরে বিঁধে আছে ৭টি বুলেট, হাতে ১টি  এবং ঊরুতে ৫টি। এতে শরীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যান এনামুল। এ কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েন তিনি।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার করে বুলেট বের করাটা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে ঘরে নেই খাবার, তার ওপর চিকিৎসার ব্যয়ভার। কীভাবে বহন করবেন এত খরচ, কিছুই জানেন না দিশেহারা এনামুল।

এনামুল হক ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামের মৃত বেলাল হোসেন ও আমিনা বেগমের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। বাবার মৃত্যুর পর দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। মা, ছোট দুই ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে পরিবারের ছয় জনের খাবারের জোগান কীভাবে দেবেন, সেই ভাবনায় অস্থির দিন কাটছে তার।

আরও পড়ুন: নারীকে টেনে তুলতে গেলে গুলি ঢুকে যায় রাকিবের গলায়

আন্দোলনে আহত এনামুল হক বলেন, ‘কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী শহরে গত ৪ আগস্ট শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। বিকালে ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দিই। মিছিলটি ভূরুঙ্গামারী থানার সামনে এলে আমাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এতে মিছিলে থাকা আমিসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। এ সময় আমার মাথা, হাত, পা ও পিঠে ৫০টির মতো রাবার বুলেটে লাগে। আহত অবস্থায় বন্ধুরা আমাকে আমার আত্মীয়র বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে স্থানীয় চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার তিন দিন পর হঠাৎ আমার মাথা প্রচুর ঝিমঝিম করতে থাকে। রংপুর ইসলামিক কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বাকি বুলেট বের করি। এখন আমার মাথায় সাতটি রাবার বুলেট আছে। হাতে একটা ও ঊরুতে পাঁচটা। সেগুলো এখনও বের করা যায়নি। চিকিৎসক বলেছেন, সেগুলো বের করতে অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে। টাকা তো নাই। তাই অপারেশন করাতে পারছি না।’

আরও পড়ুন: ‘আপনাদের তালা আমি ভেঙে দেব, তবে আমাদের বাঁচাতে হবে’

এনামুল হকের মা আমিনা বেগম (৪২) বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে এনামুলের দিনমজুরের টাকা দিয়ে সংসার চলতো। আন্দোলনে গিয়ে সে আহত হয়েছে। কাজ করতে পারে না। এখন সংসার চালানোর টাকা নাই, চিকিৎসা করাবো কীভাবে?’

এনামুলের স্ত্রী শিমু আক্তার (২১) বলেন, ‘আমার স্বামীর আয় দিয়ে কোনোমতে এতগুলো মানুষের খাওয়া-পরা চলতো। ঘরে আমাদের দুই বছর বয়সী শিশু সন্তান রয়েছে। এখন আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছে। সংসারের খরচ আর তার চিকিৎসা খরচ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। এ অবস্থায় আর্থিক সহায়তা পেলে আমাদের খুবই উপকার হতো।’

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, আহত এনামুল হকের বিষয়টি এখনই জানতে পারলাম। অফিসে এলে বিষয়টি দেখবো।

পরিবার জানায়, এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এনামুলের পরিবার কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি। তবে সম্প্রতি রংপুরের র‌্যাব-১৩ এনামুলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিগগির তার শরীরের সার্বিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সিদ্ধান্ত দেবেন।

সূত্র: বাসস