অধ্যাপক পিয়াস করিমের দশম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

ড. পিয়াস করিম
ড. পিয়াস করিম  © সংগৃহীত

আগামীকাল ১৩ অক্টোবর ড. পিয়াস করিমের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী। সর্বোপরি জীবিত থাকাকালে তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত নাগরিক। ড. পিয়াস করিম বুদ্ধির ওপর নির্ভর করে যুক্তি উপস্থাপন করতেন।

পিয়াস করিমের মৃত্যু সংবাদের পরপরই চিহ্নিত কয়েকটি টিভি চ্যানেলে মৃত পিয়াস করিমের লাশ সামনে রেখেই আপত্তিকর মিথ্যা প্রচারনা শুরু করে দেয়। অন্যদিকে পিয়াস করিমকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ আখ্যায়িত করে তাঁর মরদেহ শহীদ মিনারে আনার চেষ্টা প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ সাতটি ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এদিন সকাল নয়টা থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম ও ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্রসংগঠন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু। এ সময় আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য শহীদ মিনারে তাঁর মৃতদেহ নেয়া হয়নি।

আর্শ্চযজনকভাবে সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত তখন বলল, পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে রাখা যাবে না। রাস্তার দুই ধারে হাজার হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করে রাখা হলো লাশ শহীদ মিনারে না নিতে পারার জন্য। অথচ দেশের মানুষ সেদিন শহীদ মিনারের বদলে জাতীয় মসজিদকেই বেছে নিল।

ড. পিয়াস করিম বুদ্ধিজীবী হিসেবে জনগণের প্রত্যাশিত বলিষ্ঠ ভূমিকাই পালন করেছেন। তিনি যা বিশ্বাস করতেন, তা শাণিত যুক্তি ও প্রজ্ঞার সঙ্গে তুলে ধরতেন। এ কারণেই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জনমানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলার প্রিয়মুখ হয়ে ওঠেন। চিন্তা ও চেতনার জগতে পিয়াস করিম ছিলেন আধুনিক প্রগতিশীল বন্ধুবৎসল সাদা মনের একজন মানুষ। অথচ দর্শনগত অবস্থানের কারণে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার বাবাসহ তাকে রাজাকার বলে প্রচারণা চালানো হয়।

শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাহেব সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিলে এ অহেতুক মিথ্যা প্রপাগান্ডার পরিসমাপ্তি ঘটে। 

তিনি সাংবাদিকদের সামনে স্পষ্টভাষায় বলেন, সদ্যপ্রয়াত ড. পিয়াস করিমকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আটক করেছিল। তিনি রাজাকারের নাতি বা ছেলে নন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকায় তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন।

আইনমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘আমি পিয়াস করিমের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানি। যেটা আমি বলছি, তা আমি প্রমাণও করতে পারব। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি। তার রাজাকার হওয়ার খবরটি গণজাগরণ মঞ্চ কিংবা অন্যরা প্রচার চালাচ্ছে এটা ঠিক না। পিয়াস করিমের নানা কুমিল্লা জেলার আওয়ামী লীগের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পিয়াস করিমের বাবা আইনজীবী ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তাই ভাবতে অবাক লাগে, তিনি কী করে রাজাকারের নাতি, ছেলে বা রাজাকার হন।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পিয়াস করিম ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিয়াস করিমের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তার আসল নাম ড. মঞ্জুরুল করিম। পিয়াস তাঁর ডাক নাম। পরবর্তী সময়ে এ নামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ড. পিয়াস করিম ১৯৭৩ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৭৫ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাজনৈতিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান, জাতীয়তাবাদ ও সামাজিক তত্ত্ববিষয়ক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। দেশবরেণ্য এই টকশো আলোচক ২০০৭ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতা করেন।

ড. পিয়াস কার্রনি নব্রোস্কা বিশ্ববিদ্যালয় ও মরিসৌরি কালভার-স্টকটেন কলেজে ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক তিনি । মৃত্যুর আগ র্পযন্ত তিনি নাগরিক সমাজ নিয়ে কাজ করে গেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার বিভিন্ন জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে পিয়াস করিম ছিলেন পঞ্চম। তার বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট এম এ করিম।

ড. পিয়াস করিম ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ