কোরআন মুখস্ত করতে জন্মান্ধতা বাধা হয়নি ইয়াহইয়ার
সিলেটের জন্তাপুর গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে হাফেজ মো. ইয়াহইয়া। জন্ম থেকেই দুই চোখে দেখতে পান না তিনি। পেশায় মাদরাসার শিক্ষক ইয়াহইয়ার জন্মান্ধতা তার জীবনে কোনো বাধা হয়নি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও কারও কাছে হাত না পেতে বিভিন্ন মাদরাসায় পাঁচ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন তিনি। তার এমন চেষ্টায় অনুপ্রাণিত মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। এলাকাবাসী বলছেন, সে যেন নিজের অনুপ্রেরণা নিজেই।
২০০২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন ইয়াহইয়া। জন্মান্ধ শিশুপুত্র ৷ জন্মের পর তার বাবা-মাকে শুনতে হয়েছিল, এ ছেলে কী করবে? অনুপ্রাণিত করতে কেউ আসেনি বাবা-মা ছাড়া, বরং ছোট থেকেই কপালে জুটেছে পাড়া-পড়শির ব্যঙ্গোক্তি। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সে পঞ্চম। ১২ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করেন ইয়াহইয়া। এর কয়েক করে বছর পর হিফজ বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। রীতিমতো ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক হয়ে সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি হার মানেননি। তিনি পেরেছেন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে। তখন থেকেই বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতা করে চলেছেন।
শৈশব থেকেই তার সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর ও অসাধারণ কোরআন তেলাওয়াত যে কাউকে মুগ্ধ করে। বর্তমানে ইয়াহইয়া নোয়াখালীর সুবর্ণচরের তামীরুল উম্মাহ হিফজুল কোরআন মাদরাসায় হিফজ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। তিনি বর্তমানে কোরআনে হাফেজ বানানোর কারিগর ৷ এ মাদরাসায় তিনি প্রতিদিন ১০-১৫ জন শিক্ষানবিশ হাফেজের ছবক নেন। অন্যান্য শিক্ষকের মত তিনি খুব সাধারণভাবে শিক্ষার্থীদের পড়া দেন এবং নেন। শিক্ষার্থীরাও তার পড়ায় সন্তুষ্ট।
হাফেজ ইয়াহইয়া পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেছেন বাগেরহাট আমতলী মাদরাসা ও পাবনার চাওতুল কোরআন মাদরাসায়। নিজের গ্রাম ও কর্মরত মাদরাসার সঙ্গে তার নাড়ির সম্পর্ক। কারও সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করেন। গোসল থেকে খাবার সবই করেন নিজেই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও অন্যদের থেকে তিনি পুরোপুরি আলাদা। কোরআন পড়া ও কোরআনের বিস্তারই তার জীবনের সাধনা।
হাফেজ মো. ইয়াহইয়া বলেন, ‘আমি ১২ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করি। জীবনের শুরু থেকে আমি পৃথিবীর কোনো কিছু উপভোগ করতে পারছি না। তবে মৃত্যু পর্যন্ত আমি কোরআনের সঙ্গে থাকতে চাই।’
সুবর্ণচরের তামীরুল উম্মাহ হিফজুল কুরআন মাদরাসার মুহতামিম এইচ এম নাছরুল্লাহ বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা যে স্বপ্ন পূরণের জন্য বাধা নয় এর দৃষ্টান্ত শিক্ষক ইয়াহইয়া। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও অবিরাম বিলিয়ে যাচ্ছেন কোরআনের আলো। দৃষ্টি তার সামনে এগোনোতে কোনো বাধা হতে পারেনি, উল্টো সে এক অনুপ্রেরণার নাম।
তিনি বলেন, ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী ইয়াহইয়া কারও বোঝা না হয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কোরআনের সঙ্গে থাকতে চান। তার এ উদ্যম ও মনের শক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্মজীবনকে প্রভাবিত করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছি। সূত্র: আরটিভি