রাজশাহীতে বাড়ি দখল করে বিএনপির কার্যালয়
রাজশাহী বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি ভবনের দুটি কক্ষ দখল করে কার্যালয় বানানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ কমিশনারের কাছেও অভিযোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন অজুহাতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ওই বাড়ি ছাড়ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী নগরের মালোপাড়া এলাকার কাবিল ম্যানশন নামের চারতলা বাড়িটির দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়। ওয়ারিশসূত্রে ওই ভবনের মালিক আটজন। সবাই সম্পর্কে ভাইবোন। এই ভবন থেকে বিএনপির কার্যালয় সরাতে গত ১৭ মে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেন তারা। এত দিন ভবনটির দেখভাল করতেন ভাইবোনদের সবচেয়ে বড় আবদুল ওহাব। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। এর পর থেকে প্রবাসে থাকা তার ভাই শামস আলম দেখভাল করছেন।
বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৮০০ বর্গফুটের দুটি কক্ষ ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে মাসিক ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আবদুল ওহাব পরের মাসেই তাদের কক্ষ ছাড়ার জন্য নোটিশ দেন। এরপর উকিল নোটিশ দেন। তারপরও কক্ষগুলো না ছাড়ায় মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন।
পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন সূত্রে জানা যায়, কক্ষ দুটি ভাড়া নেওয়ার সময় বিএনপির নেতারা ব্যক্তিগত কার্যালয় করার জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির দলীয় কার্যালয় হিসেবে অবৈধ ও জবরদস্তিভাবে ব্যবহার করে আসছেন। ফলে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও আনে বাড়ির মালিকপক্ষ।
আবেদনে আরও বলা হয়, কাবিল ম্যানশন ভবনটি ১৯৬৪ সালের নির্মাণ করা হয়। এটি এখন পুরোনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সব অংশীদার একমত হয়ে ভবনটি ভেঙে ফেলে নতুন করে নির্মাণের জন্য একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির দখলে থাকা ভবনের কক্ষ দুটি খালি করার জন্য ডাকযোগে লিখিত নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু কক্ষ খালি না করায় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হতে অপরাগতা প্রকাশ করে। আবেদনে আরও বলা হয়েছে, চুক্তিপত্রে বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করার শর্ত থাকলেও বিএনপির নেতারা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছেন।
মালিকপক্ষ জানায়, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী (ইশা) ও অন্যদের কক্ষ দুটি খালি করার জন্য অসংখ্যবার মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। বিএনপির নেতারা কথা দিয়েও কক্ষগুলো ছাড়েননি। সব সময় বিভিন্ন অজুহাত, টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করে আসছেন।
ভবনের অংশীদারেরা জানান, উকিল নোটিশে সাত দিনের মধ্যে বিএনপি নেতাদের বকেয়া পাওনাসহ কক্ষ দুটি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের কিছুদিন আগে বকেয়া ভাড়া না দিয়েই তারা ঘর ছেড়ে দেন। এরপর বাড়ি মালিক ভবনটি ভাঙতে শুরু করেন। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন হলে বিএনপির নেতারা আবার এসে ওই ভবনের দুই কক্ষ দখলে নেন।
আরও পড়ুন: নেতা-কর্মীদের ওপর ‘হামলা-নির্যাতনের’ তথ্য সংগ্রহ করছে আওয়ামী লীগ
এ অবস্থায় কয়েক দিন আগে আবদুল ওহাব মারা যান। তার ভাই শামস আলম দেশের বাইরে থাকেন। তিনি এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, বিএনপি কার্যালয়ের আগের সাইনবোর্ডটি ছোট ছিল। এবার ওঠার সময় তারা বড় সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। বাধ্য হয়ে তারা ঘর ভাঙা স্থগিত রেখেছেন। তাদের সমস্যার কথা বারবার রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ককে বলা হলেও তিনি কর্ণপাত করছেন না। এর মধ্যে কক্ষ দুটির বকেয়া ভাড়া বেড়ে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি নেতারা আগের মতোই বসে আড্ডা দিচ্ছেন। একজন নেতা জানান, সাড়ে সাতটার দিকে সেখানে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্যই তারা বসে রয়েছেন।