০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৭

শিক্ষকরা জাতির প্রয়োজন না মেটাতে পারলে জাতীয়করণে লাভ নেই: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয়করণ (শিক্ষাব্যবস্থা) করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। অতীতে শিল্প করখানা সব জাতীয়করণ করা হয়েছিল। তাতে কোন লাভ হয়নি। আবার সেসব প্রকল্প বেসরকারি খাতের হাতে তুলে দিয়ে হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি যদি শিক্ষক হিসেবে ডেলিভার করতে না পারেন, আপনি যদি জাতির প্রয়োজন মেটাতে না পারেন তাহলে জাতীয়করণ করে কোন লাভ হবে না।

শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে শিক্ষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।  শিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয়করণের দাবিতে এই সমাবেশ আয়োজন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট।

তিনি আরও বলেন, এখন জাতীয়করণ করা হলে সেখানে শিক্ষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেকশনের প্রশ্ন আসবে। সেখানে যারা শিক্ষকতা করবেন তাদের গুণগত মান অর্জন করতে হবে। তখন আপনাদেরই অনেকে বিভিন্ন নীতি মানতে চাইবেন না। এসব জায়গা থেকেই বেড়িয়ে আসতে হবে। আমাদের নিজেদেরকে যোগ্য তৈরি করে দেশের জন্য রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে হবে। 

আরও পড়ুন: প্রতিটি সিভি দেখে দেখেই ৪০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ: শিক্ষা উপদেষ্টা

বিএনপি ক্ষমতায় আসলে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে দলটির মহাসচিব আরও বলেন, আপনাদের সমস্যাগুলো আমরা অবহিত। আপনাদের সমস্যাগুলো আমরা সমাধান করতে চাই। আমাদের পক্ষ থেকে যে ৩১ দফা রয়েছে, সেখানে আমরা পরিষ্কার করে এই সমস্যাগুলো সমাধানের কথা বলেছি। শিক্ষকদের জাতীয়করণের যে দাবি তা অন্তত ন্যায়সঙ্গত। 

“সবার আগে আপনাদের নিজেদের একটা উপলব্ধি আনতে হবে, আমি যে পেশায় নিয়োজিত সেটি শুধু একটি পেশা নয়, এটা জাতি গঠনের পেশা। কিন্তু আমরা অনেকেই তা করি না, আমরা মনে করি এটা আরেকটা চাকরির মতোই।”

তিনি বলেন, শিক্ষকদের দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদেরকে দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। শিক্ষকরা যদি রাজনীতি দূরে না থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগ যে অবস্থা তৈরি করে দিয়ে গেছে তা পরিবর্তন হবে না। সবার আগে আপনাদের নিজেদের একটা উপলব্ধি আনতে হবে, আমি যে পেশায় নিয়োজিত সেটি শুধু একটি পেশা নয়, এটা জাতি গঠনের পেশা। কিন্তু আমরা অনেকেই তা করি না, আমরা মনে করি এটা আরেকটা চাকরির মতোই।

শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে এই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ বলেন, শিক্ষাকে সঠিক কাঠামোর মধ্যে না আনা গেলে জাতির উন্নয়ন  হবে না। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, ৫৩ বছর পার হলেও সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হয়ে আছে শিক্ষা ব্যবস্থা। আজ শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। পরীক্ষাসহ বিভিন্ন রকমের দুর্নীতির চক্রান্তের বেড়াজালে শিক্ষা ব্যবস্থাকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ

তিনি আরও বলেন, আপনারা অনেকেই চাকরির জন্য আওয়ামী লীগের এমপিদের হাতে কয়েক লক্ষ টাকা করে তুলে দিয়েছেন। এটা আপনারা ভালো কাজ করেন নাই। জমি বিক্রি করে আপনারা এইসব টাকা তুলে দিয়েছেন। এই যে বিষয়টা, এটা দেশের সবক্ষেত্রেই হয়েছে। এগুলো বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছে, মানুষ প্রাণ দিয়েছে এখন আপনারা সবাই দলে দলে বেড়িয়ে এসেছেন বিভিন্ন দাবি নিয়ে। স্বৈরাচারীরা সবাইকেই বাধ্য করে চুপ থাকতে, ওর মধ্য থেকেই উঠে দাঁড়াতে হয়। ছাত্রদেরও বাধ্য করে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদেরও বারবার জেলে পাঠানো হয়েছে, তারমধ্য থেকেও আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি। আপনাদেরকেও সে মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আপনি সেই মানুষটা হয়ে উঠতে না পারলে জাতির কোন উন্নতি হবে না। এই বিরাট বিরাট সমাবেশ করলেই সমাধান হবে না। 

শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্দশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ছেলেরা এত ডিগ্রি নিয়েও একটা শুদ্ধ বাংলা বাক্য এখনো লিখতে পারে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমন জায়গায় চলে গিয়েছে যে আমাদের উন্নয়নের জন্য যে মানবসম্পদ দরকার তা তৈরি হচ্ছে না।  এখন পরিবর্তনের যে ধারাতেও যদি আমরা পরিবর্তিত হতে না পারি জাতি চরমভাবে হতাশ হবে।