০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৫৩

নারী অধিকার কমিশন গঠনের দাবিতে সমাবেশ

‘নারী অধিকার কমিশন’ গঠনের দাবিতে নারী সংহতির সমাবেশ  © টিডিসি

সমানাধিকার-ন্যায্যতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পদক্ষেপের জন্য ‘নারী অধিকার কমিশন’ গঠনের দাবিতে সমাবেশ করেছে নারী সংহতি।

শুক্রবার (০৪ অক্টোবর) বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সংহতি সমাবেশ করেন বলে সংগঠনের প্রচার সম্পাদক কানিজ ফাতেমা প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়।

সমাবেশে নারী অধিকার কমিশন গঠনসহ আরও কিছু দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনে সংস্কার করা; অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। সকল প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী অভিযোগ সেল গঠন ও কার্যকর করা। ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (সংশোধিত) এর ১৪৬ (৩) ধারা পুনঃ-সংস্কারের মাধ্যমে ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ বন্ধ করা। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের এক তৃতীয়াংশে নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা। ডে-কেয়ার, ছয় মাসের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও নিরাপদ গণপরিবহন-এর ব্যবস্থা করা। নারী-পুরুষ সকল শ্রমিকের জন্য মানসম্মত জাতীয় মজুরি নির্ধারণ করা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র-সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংস্কারের প্রসঙ্গ সামনে আসছে। এই বাস্তবতায় উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনে সংস্কার, সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা এবং ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নারী বিদ্বেষী তৎপরতা বন্ধসহ সমাজের সকল স্তরে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার কথা উঠে আসে সমাবেশে।

এ সময় বক্তারা বলেন, এদেশের নারী সমাজ দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে অভিন্ন পারিবারিক আইনের জন্য যেখানে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ এবং সন্তানের অভিভাবকত্বে নারী পাবে সমান অধিকার।  বিদ্যমান সংবিধান নারীদের অধিকার দিয়েছে জনজীবনে কিন্তু পারিবারিক অধিকার, সম্পত্তির অধিকার রয়ে গেছে যার যার ধর্মের অধীনে। ফলে ধর্মের অজুহাত দেখিয়ে এই বিষয়ে সংস্কারে হাত দেয়নি বিগত কোনো সরকার।

তারা আরও বলেন, এদেশের ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের জন্য আইন এবং বিচার প্রক্রিয়া পুরুষতান্ত্রিক। ফলে পাহাড়ে-সমতলে নারীর ওপর যৌন পীড়ন এবং সহিংসতা প্রতিদিনকার বাস্তবতা। নারীর উপর যেকোনো নিপীড়ন-নির্যাতন বিশেষ করে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ বন্ধ করার দাবি তোলেন বক্তারা। দাবি উঠে হাইকোর্ট প্রণীত যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও অভিযোগ সেলের কার্যকর ও পূর্ণ বাস্তবায়নের।

উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় যে, বিভিন্ন পেশায় বেতন, পদমর্যাদা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী বৈষম্যের শিকার। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্ট শিল্পের নারী শ্রমিকরা যে মজুরি পান তা স্বাস্থ্যকর ও  মানসম্মত জীবন যাপনের জন্য যথেষ্ট নয়। সকল শ্রমিকের জন্য মানসম্মত জাতীয় মজুরি নির্ধারণ হবে বৈষম্য বিরোধিতার অন্যতম প্রধান কাজ।

বক্তারা বলেন, নীতি নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র রাজনীতি এবং সরকারের নেতৃত্বে নারীদের অংশগ্রহণ নগণ্য। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে  রাজনৈতিক দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত থাকলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে তার কার্যকর বাস্তবায়ন নাই। যদিও দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী, তবে স্থানীয় সরকার পদে তাদের প্রতিনিধিত্ব এখনও নগণ্য। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন প্রহসন মাত্র। 

তারা বলেন, এই বাস্তবতায় জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের এক তৃতীয়াংশে নারী সদস্য নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি ওঠে সমাবেশে। তার আগ পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। পাশাপাশি, নারীর জীবনে দ্বৈত শ্রমের বোঝা লাঘব এবং চলাফেরার নিরাপত্তায় ডে-কেয়ার, ছয় মাস স্ব-বেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, নিরাপদ গণপরিবহন, শহরগুলোতে পর্যাপ্ত গণ শৌচাগার এবং আরও নানা বিষয়ে যথাযথ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করা হয়।

 সমাপনী বক্তব্যে নারী সংহতির সভাপতি বলেন, নারীর জীবনে নানা ইস্যুতে ন্যায্য অধিকার এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য ‘নারী অধিকার কমিশন’ গঠন করা জরুরি। সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের জন্য অনেকগুলো কমিশন গঠন করেছেন, কিন্তু নারী অধিকার কমিশনের বিষয়ে কোনো আওয়াজ দেখছি না। 

নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ সভাপতি ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখ্তার, সহ সাধারণ সম্পাদক রেবেকা নীলা, প্রচার সম্পাদক কানিজ ফাতেমা এবং সদস্য রেক্সোনা সুমি।

সংহতি জানিয়ে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. স্নিগ্ধা রিজওয়ানা, উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি, ফটো জার্নালিস্ট ও অ্যাক্টিভিস্ট জান্নাতুল মাওয়া, অধিকার কর্মী ওয়ারদা আশরাফ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বুশরা জামান, নৃবিজ্ঞানী দিলশাদ স্বাতি, শৈশবের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা মান্নান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাকিয়া শিশির, ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনের সহসভাপতি সিমা দাস সিমু এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতা নূসরাত হকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব। এছাড়াও দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, অ্যাক্টিভিস্ট দিলশানা পারুল, নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক রেহনুমা আহমদ।