সেপ্টেম্বরে ২৮ জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা
সেপ্টেম্বরে দেশে গণপিটুনিতে নামে সারা দেশে ২৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এমন ৩৬টি ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৪ জন। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে কমপক্ষে ৮৩টি রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন এবং ৭০৬ জন আহত হয়েছেন।
এর মধ্যে ৪৫টি ঘটনাই ঘটেছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসের ৮৩টি সহিংসতার মধ্যে ৪৫টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে, ২৩টি ঘটনা বিএনপি-আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব ঘিরে, ৫টি আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে এবং বাকি ১০টি ঘটনা অন্যান্য দলের। নিহত ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন বিএনপির, বাকি পাঁচজন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। তাদের মধ্যে নিজ দলের কোন্দলে নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক ও বিএনপির আটজন। বাকি সাতজন নিহত হয়েছেন বিরোধীদের হামলায়। এ ছাড়া সারা দেশে আধিপত্য বিস্তার ও দুর্বৃত্তের হামলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর আরও অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব সহিসংতায় ২৫০ ঘরবাড়ি, যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিবেদনে গণপিটুনিতে ২৮ জন নিহতের তথ্য জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়।
গত মাসে ১৮টি ঘটনায় হেনস্তা ও নির্যাতনের শিকার ৯০ সাংবাদিকের মধ্যে আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২১ জন, লাঞ্ছিত হয়েছেন দুজন, হুমকির সম্মুখীন তিনজন, গ্রেপ্তার হয়েছেন দুজন। এ ছাড়া ৫ মামলায় ৬২ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
গত মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে দুটি হামলার ঘটনায় একটি মন্দির ও চারটি প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এ ছাড়া ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাজারে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কমপক্ষে ৯০ জন আহত হয়েছেন জানিয়ে এসব ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে বাঙালি-পাহাড়ি সংঘর্ষে ছয়জন নিহতের ঘটনায় পার্বত্য অঞ্চলে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং শিল্পাঞ্চলে পুলিশের গুলিতে এক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় শ্রমিক অসন্তোষ আরও বেড়েছে।
সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতির কিছু বিষয়ে উন্নতি ঘটলেও সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি; বরং কিছুক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা, রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তার, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ, শ্রমিক হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নির্যাতন ও হত্যা, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
পরিস্থিতির উন্নয়নে সুপারিশ জানিয়ে এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজ ও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে।