এক জেলায় ১৯ বছর সরকারি কর্মকর্তার!
একই কর্মস্থলে একজন সরকারি কর্মকর্তার টানা তিন বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। তবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল আলম এক জেলাতেই কর্মরত আছেন ১৯ বছর ধরে। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে টানা তিন বছরের বেশি থাকার কথা নয়। কিন্তু বিধি উপেক্ষা করে টানা ১৯ বছর ধরে এক জেলাতেই ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করছেন শামসুল আলম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামসুল আলমের চাকরি জীবনের শুরুটা কুমিল্লায়। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কুমিল্লাতেই আছেন। দীর্ঘ এই সময়ে কখনও এসিল্যান্ড, কখনও ইউএনও, কখন পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা এবং সর্বশেষ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদ বদল করে এখানেই থেকেছেন।
কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের আস্থাভাজন সহযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি এই কর্মকর্তা। বাহারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এই সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
শামসুল আলম কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার হিসেবে ২০০৫ সালের ১৬ অক্টোবর চাকরি জীবনের শুরু করেন। ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পদায়ন হন। ২০০৭ সালের ১ জুলাই মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি-এসিল্যান্ড) হিসেবে যোগ দিয়ে ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকেছেন। এরপর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিলেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সচিব পদে যোগ দিয়ে ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত এই চেয়ারে ছিলেন।
আরও পড়ুন: প্রশাসন ক্যাডারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অপপ্রয়াস চলছে: অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন
২০১৫ সালের ১৮ মে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এই পদে ছিলেন ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল কুমিল্লার জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে আবারও যোগ দেন। এই চেয়ারে ছিলেন ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ২০২৩ সালের ৬ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হন। তখনে থেকে বর্তমানে এই পদেই কর্মরত আছেন। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও স্বপদে বহাল আছেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, কাজ পাওয়ার জন্য এই কর্মকর্তার ঘরের বাজার পর্যন্ত করে দিতে হতো ঠিকাদারদের। তার ঘনিষ্ঠ সহচর তুহিন ও সিটির দক্ষিণ কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে নানা দুর্নীতি করেছেন। টাকা খরচ করে এত বছর ধরে কুমিল্লায় আছেন। নিজের ও স্ত্রী নামে করেছেন কোটি টাকার সম্পদ।
এ বিষয়ে কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেছেন, ‘বাহারের কারণেই কুমিল্লায় এত বছর ধরে চাকরি করছেন শামসুল আলম। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই উল্টো ব্যবস্থা নিতেন বাহার। আমরা তার দুর্নীতি নিয়ে দুদকে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছিলাম। আমি হাজিরাও দিয়েছিলাম। কিন্তু এগুলো প্রমাণিত হওয়ার পরও কিছুই হয়নি। কারণ তার পেছনে ছিলেন বাহার।’
দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এক জেলায় থাকাকে কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে শামসুল আলম একটি অনলাইনকে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি তো কিছুই করিনি। করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকার আমাকে যেখানে পদায়ন করবে, আমি সেখানেই যাবো।’
আরও পড়ুন: ‘নতুন বাসা গোছাচ্ছি, তোমাদের যেন লুট-চুরি আর আগুন দিতে সুবিধা হয়’
বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, বদলিও করা হয়েছিল, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগগুলো তো প্রমাণিত হয়নি।’
সর্বশেষ গত বুধবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে এই নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করা হয়। অনিয়ম, দুর্নীতি ও বেতন বৈষম্যসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেন সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা তার কক্ষে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ রাখেন তারা। এ সময় হাজারো কর্মচারী সিইইউর অফিসের সামনে অবস্থান করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টার পরে ব্যর্থ হয়। পরে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আন্দোলনকারী কর্মচারীরা ওই পত্রিকাকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকাশ্যে দুর্নীতি করে আসছেন, আমরা তার প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের চাকরি হারাতে হয়।