০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১১

আয়নাঘরের খোঁজ পেয়েছে সরকারের কমিশন, জানা গেল অবস্থান

আয়নাঘর  © সংগৃহীত

আয়নাঘর থেকে ফেরা ব্যক্তিদের দেওয়া বক্তব্যের মিল পেয়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। সেখানে অনেক আলামত এরই মধ্যে নষ্ট করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির কাছে ৪০০টি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি অনুসন্ধান কমিশনের সভাপতি।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক যারা গুম হয়েছেন তাদের অভিযোগগুলো নিয়েই আমরা কাজ করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরও আমরা ডাকব। বক্তব্যের জন্য সমন দেব। অভিযুক্তরা না আসলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সবচেয়ে বেশি গুমের অভিযোগ এসেছে র‌্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির বিরুদ্ধে। 

তিনি বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেছি। ১ অক্টোবর আমরা ডিবি ও সিটিটিসি পরিদর্শন করেছি। তবে সেখানে কোনো বন্দী আমরা পাইনি। সম্ভবত ৫ আগস্টের পর সেখানে থেকে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: আলোচিত এই আয়নাঘর কী?

৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় ছিল বলে জানান মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ১০ অক্টোবর পর্যন্ত এই সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৭৫ জন সশরীরে এসে তাদের বিবৃতি দিয়েছেন। অনেকে ডাকযোগে পাঠিয়েছেন, অনেকে ইমেইলে দিয়েছেন। প্রয়োজনে অভিযোগ নেওয়ার সময়সীমা আরো বাড়ানো হবে। তিন মাসে তদন্ত শেষ হবে কিনা সেটা সামনে বোঝা যাবে বলেও জানান তিনি।

কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমাদের ভিজিটের সময় ডিজিএফআইয়ের যে আয়নাঘর দেখেছি, তার সঙ্গে ভুক্তভোগীদের বর্ণনার মিল পেয়েছি। তবে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ (এভিডেন্স) তারা নষ্ট করেছে। বিশেষ করে দেয়ালের লেখাগুলো পেইন্ট করে মুছে দেওয়া হয়েছে। আমরা মৌখিকভাবে তাদের বলেছি এবং লিখিত ভাবেও তাদের জানিয়েছি যেন যে অবস্থায় আমরা আয়নাঘর দেখে এসেছি, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার কোনো পরিবর্তন যেন না হয়।

ইতোমধ্যে ৪০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে জানিয়ে কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, নতুন কিছু বিষয় আমরা জানতে পেরেছি। এর আগে কেউ কখনো গুম নিয়ে এসব ঘটনা বলেননি। থানায় তাঁদের জিডিও নেওয়া হয়নি। আমরা সবাইকে কমিশনে আসতে আহবান জানাই। আমরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে চাই। ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক অভিযোগ আসছে। কেউ আসতে না পারলে ডাকযোগে, ইমেইলে অভিযোগ পাঠাতে পারেন। আমরা সেগুলোও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখব। 

‘আমরা ফোন করে তাদের কথাগুলো শুনে নেব। কমিশনের আরেক সদস্য নূর খান বলেন, আমরা ভুক্তভোগীর পরিচয় দিয়ে তাঁকে আলাদা করব না। প্রতিটি অভিযোগ আমরা শুনতে চাই। কী হয়েছিল তা জানতে চাই। কীভাবে আইন না মেনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল তা বুঝতে চাই।’

ভুক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে গোপন বন্দিশালার সন্ধান পেয়েছে কমিশন। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলটি (জেআইসি) ডিজিএফআইয়ের সদর দফতরের ভেতরেই। দোতলা ওই ভবনে ২২টি সেল আছে।

এর আগে ২৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের হাতে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: যেভাবে আয়নাঘরে চলত নির্মম নির্যাতন

উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের কার্যক্রম শুরুর পর ১৩ কর্মদিবসে ৪০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের দেওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে গোপন বন্দিশালার সন্ধান পেয়েছে কমিশন। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলটি (জেআইসি) ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরের ভেতরেই। দোতলা ওই ভবনে ২২টি সেল আছে।