৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৪

ভোর রাতে জাল ফেলে অন্যের পুকুরের মাছ বিক্রি করে দিলেন বিএনপি নেতা

মাছ ধরার চিত্র এবং মো. শহীদুল ইসলাম ও তার ভাই আব্দুর রশীদ  © টিডিসি ফটো

আদিবাসী পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি এবং স্থানীয়দের জমি হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগের পর এবার রাতের আধারে অন্যের পুকুরের মাছ তুলে বিক্রি করেছেন পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া থানার খানমরিচ ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম ও তার ভাই আব্দুর রশীদ। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো. ইয়াহিয়া ও তার পরিবারের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, ১৭ বিঘার ওই পুকুরটিতে অন্তত ১০০ মন মাছ ছিল, যার অধিকাংশই তুলে বিক্রি করে দিয়েছেন রশীদ ও ভাই।

বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই ভাঙ্গুড়া থানা, ইউএনও ও থানা ক্যাম্প বরাবর  অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। অভিযোগে বলা হয়,  ১৭ বিঘার পুকুরটির অধিকাংশ মালিকানা (প্রায় ১০ বিঘা) প্রয়াত মো. আজগার আলীর ২ সন্তান ও মেয়েদের। বাকি ৭ বিঘার মধ্যে সাড়ে ৪ বিঘা স্থানীয় গ্রামবাসীর এবং সোয়া ২ বিঘার দুই মালিক আব্দুর রশীদ ও তার ভাই। এই দুই বিঘার ক্ষমতাবলেই পুকুর কাটার দেড় বছরের মাথায় দখলে নিয়ে নেন রশীদ ও তার ভাই শহীদুল ইসলাম।

ভুক্তভোগীরা জানান, ‘পুকুরটির দখল নিতে এর আগে গত ৩ আগস্ট পাবনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাসনায়েন রাসেলের বাসায় গোপন বৈঠক করেন রশীদ। ঘুষ হিসেবে সেদিন ওই বাড়িতে ২৮ হাজার টাকার মাছও নিয়ে যান রশীদ। সিদ্ধান্ত হয়- পুকুর দখল শেষে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের। কিন্তু ওই চুক্তির দু-দিন পর সরকার পতন হওয়ায় তা আলোর মুখ দেখেনি। মূলত সেই কাজটিই সরকার পতনের পর বিএনপি নেতা ভাইয়ের সহায়তায় করলেন রশীদ।’

ঘটনার ভুক্তভোগী ইয়াহিয়া বলেন, ‘আমি গত ৩ দফায় ধার-দেনা করে পুকুরটি সাজিয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই রশীদ এটি ভেঙে গ্রাস করে নিয়েছেন। আমি এর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন ভবিষ্যতে সে কোনোদিন অন্যের জমি-পুকুর নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সাহস না পায়।’

ইয়াহিয়া আরও বলেন, ‘পুকুর কাটার ২ বছরের মাথায় গ্রাম্য নেতাদের মাধ্যমে চাপ দিয়ে আমাকে এখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। সে সময় লিজ বাবদ প্রতিবছর টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও গত ১৪ বছরে এক টাকায় দেয়নি রশীদ। শুধু লিজের এই টাকা (প্রচলিত নিয়মে ২০ হাজার) ধরলেও পুরো এই সময়ে রশীদের কাছ থেকে তার পাওনা ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সুতরাং আমি অবৈধ উপায়ে আজকের মাছ ধরা এবং গত ১৪ বছরের ক্ষতিপূরণ চাই।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুর রশীদ বলেন, আমাদের নামে বিভিন্ন অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। গ্রামের কয়েকজন এটা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে করছে। আমরা কারো জমি দখলে নেইনি। নিজেদের জমিতে নিজেরা মাছ চাষ করেছি।’ 

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা সরেজমিনে এসে দেখে যেতে পারেন। এই পুকুর অনেক বছর থেকেই আমাদের। যারা নিজেদের মালিকানা দাবি করছেন, তাদের কাছে প্রমাণ নাই। তারা বহু আগেই এই জমি আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন। আর আজ সকালে বেশি মাছ ধরা হয়নি, বরং পুকুরে কী পরিমাণ মাছ আছে সেটা দেখার জন্য জাল ফেলেছিলাম। এতে এক থেকে দেড় মণ মাছ তোলা হয়।’

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ভাঙ্গুরা থানার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহার জানান, আমি বিষয়টি সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। তাদের এক পক্ষ একটা অভিযোগ দিয়েছে, দুপক্ষকে ডেকে কথা বললে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। এই মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। 

তবে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, এর আগেও স্থানীয় শ্রী আফাল চন্দ্র মুরালীসহ আদিবাসীদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ আছে আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে।