দুইমাস ধরে কর্মস্থলে আসেন না সাভারের টেলিটক অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের পর দেশের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান পুনঃসংস্কার করা হলেও এখনো সংস্কার করা হয়নি সাভারের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) অধীনে টেলিটক কাস্টমার কেয়ার এন্ড সেলস সেন্টারের অফিস ভবন।
দুইমাস পেরিয়ে গেলেও কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছেন না সেখানে চাকুরীরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি তথ্য ও ফোনসেবা। প্রতিদিনই সেবা নিতে আসছেন একাধিক গ্রাহক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখতে পাই, অফিস কক্ষের প্রবেশমুখের কেঁচিগেইটে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। জানালার কাচঁ আস্ত নেই, ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভিতরে থাকা আসবাবপত্র, তারের লাইনবক্স পুরোটাই ভাঙা। দশ গজ এগিয়ে কক্ষটির পশ্চিম পার্শ্বে জানালার কফি কালারের কাঁচের টুকরোগুলো স্তুপ করে রাখা হয়েছে। তবে অফিস কক্ষটি পুড়িয়ে দেয়া বা এরকমের কোন ঘটনা ঘটানো হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু নাঈম ও তার বড়ভাইতুল্য বন্ধু মোটরযান যোগে সেবা নিতে এসেছিলেন। তারা বহু আগ থেকেই সরকারি ফোন টেলিটকের সাথে সম্পৃক্ত বলেও জানিয়েছেন ডেইলি ক্যাম্পাসকে। নতুন আরো টেলিটক সিম নিতে এসেছেন, কিন্তু অফিসের গেইটে তালা দেখতে পেয়ে ফিরে যান। এভাবে করে প্রতিদিনই বহু গ্রাহক সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
টেলিফোন ভবনের দ্বিতীয় ফটকের গাছতলায় চেয়ার পেতে বসে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি এখানের নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালন করেন। সিরাজুল জানিয়েছেন, দুইমাস ধরে কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী এখানে আসেন না। প্রতিদিন অনেকেই তাদের কাছে সেবার জন্য আসেন কিন্তু এখানে কর্মরত ম্যাডাম স্যারদের না পেয়ে তারা ফিরে যান।
টেলিটক কাস্টমার কেয়ারের ফটকে সাদা কাগজে যোগাযোগের একটি নাম্বার টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই নাম্বারে যোগাযোগ করলে তাহমিনা আক্তার নামের এক নারী জানান— গেল ১৮ জুলাই আন্দোলনের চলন্ত সময়ে টেলিটকের অফিসটি ভাংচুর করা হয়। সেখানে থাকা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স আসবাবপত্র ও চেয়ার- টেবিল নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর এখনো কোনো সংস্কার করা হয়নি সেখানে। সেখানে নতুন করে সংস্কার না হলে কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। এরপর অফিসের ইনচার্জ ফারজানা ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
টেলিফোন ভবনে গিয়ে সংস্কার না করার কারণ জানতে চাইলে সেখানে রফিক নামের এক কর্মচারী বলেন, আপনার যদি অতি জরুরী প্রয়োজন হয় তাহলে ঢাকার মিরপুর কিংবা শের-ই বাংলা নগরের অফিসে চলে যান, পূর্ণ সার্ভিস পাবেন। একথা বলে তিনি দ্বিতীয় তলার উত্তর-পশ্চিম কোণে কর্মকর্তাদের কক্ষ দেখিয়ে দেন।
নাম অপ্রকাশ করে সেখানে থাকা এক ব্যক্তি ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানালেন— ‘বিটিসিএল এবং টেলিটক একই প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের (টেলিটক) সাথে আমাদের (বিটিসিএল) কোনো সম্পর্ক নেই।’ অথচ বিটিসিএলের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হলো টেলিটক, যার অফিস সাভারে একটিই। সাভারসহ পুরো ঢাকা জেলা উত্তরের বাসিন্দারা সেবা নিতে এখানেই এসে থাকেন।
সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানটি সংস্কার ও পুনর্গঠনের বিষয় নিয়ে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বরাবর বিস্তারিত তথ্যসহ মেইল প্রেরণ করার একদিন পেরিয়ে গেলেও ফিরতি কোন প্রতুত্তর জানাননি কর্তৃপক্ষ।