কোটা আন্দোলন চলাকালে ২২ জুলাই আমার সঙ্গে যা হয়েছিল
গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা সংস্থার লক্ষ্যবস্তু শুধু আন্দোলনকারীরা ছিলেন না। এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরাও ছিলেন তাদের লক্ষ্যবস্তু। তেমনি একজন দৈনিক কালবেলা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল জোবায়ের। এই আন্দোলন চলাকালে গত ২২ জুলাই একটি গোয়েন্দা সংস্থা কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছিল এই সাংবাদিককে।
কোন প্রেক্ষাপটে এবং কেন তাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল সেই গোয়েন্দা সংস্থাটি, ‘২২ জুলাই আমার সঙ্গে যা হয়েছিল’ শীর্ষক শিরোনামে ফেসবুকের এক পোস্টে এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন আবদুল্লাহ আল জোবায়ের। নিচে সেই ফেসবুকে পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল-
২২ জুলাই সকাল আনুমানিক ১১টা। কালবেলার চিফ রিপোর্টার কবির ভাই কল দিয়ে বললেন- এটা কি নিউজ করেছো? সকাল থেকেই ইন্টেলিজেন্স গ্রুপগুলো ঝামেলা শুরু করেছে। কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠা আমি আগামাথা কিছুই বুঝছিলাম না। একটু পরে অবশ্য কারণ বুঝতে পারলাম।
আন্দোলনের দিনগুলোতে ফিরি। দৈনিক সংবাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন কাভার করেছি। এই আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা হাসান আল মামুন, নুরুল হক নুর, রাশেদ খাঁন, ফারুক হাসান, আতাউল্লাহ- সবার উত্থান চোখের সামনে দেখা। ৬ বছর পর আবারও একই দাবিতে আন্দোলন। যাদের ক্যাম্পাস ছাড়ার আগে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখেছি, তারাই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদিও এখন আর ক্যাম্পাস রিপোর্টার নই, তবুও যেহেতু শিক্ষা ও ক্যাম্পাস নিয়ে কাজ, সে কারণে ক্যাম্পাস রিপোর্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলন কাভার করতেই হলো।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি আন্দোলন যখন তুঙ্গে, প্রথমবারের মতো রুলিং পার্টির স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ক্যাম্পাসছাড়া, তখন ক্যাম্পাসও বন্ধ হয়ে গেল। ক্যাম্পাস রিপোর্টার চলে গেল বাড়িতে, বাড়তি চাপ আমার ওপরে।
এমনই একটা সময়ে ২১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটার সংস্কার করে রায় ঘোষণা করল আপিল বিভাগ। দুপুর ১টার পর রায় ঘোষণা হয়, ১টা ৩৬/৪২ মিনিটের দিকে আমি সারজিসকে কল দিয়ে জানতে চাই- রায় তো হলো, আপনারা কি তাতে সন্তুষ্ট, আন্দোলন কি স্থগিত হবে? সারজিস জানালো- তারা সংসদে আইন পাস ও বাকি দাবিগুলো মেনে নেওয়ার দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখলেই কেবল আন্দোলন থেকে সরে আসবেন। এছাড়া তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
এরপর আমি অফিসে যাই। তখন যেহেতু ব্ল্যাকআউট চলছে, আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে আসতো। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে মেসেজ আসলো যে- আন্দোলন চলমান থাকবে। ৫৯ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক মিলে প্রেস রিলিজটি পাঠিয়েছেন। সেটি এসেছে অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের সাক্ষরে।
আমি কাদেরের দুটো নম্বরে কল দিলাম, কল যায়নি। যেই নম্বর থেকে মেসেজ আসলো, সেটায় কল দিলে মুসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ নামে একজন রিসিভ করলো। তালিকা দেখে তাকে সহ-সমন্বয়ক হিসেবে নিশ্চিত করলাম। তার কাছে আমার জিজ্ঞাসা ছিল, ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট প্যানেলে ৫৯ জনের কথা উল্লেখ কেন? সে জানালো, নাহিদ, আসিফ ও আবু বাকের মজুমদার তখন গু*মের শিকার। এছাড়া, সারজিস, হাসনাত ও হাসিবের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারেনি। বাকিরা মিলে প্রেস রিলিজটা দিয়েছে। পরে উমামা ফাতেমাকে কল দিলাম। সেও জানালো, আন্দোলন চলবে।
সন্ধ্যার পরপরই নিউজ সাবমিট করলাম। অফিস থেকে জানতে চাইলো কে কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নাম বললাম। এরপর শরীরটা খারাপ হতে শুরু করে হঠাৎ। সে কারণে আর্লি লিভ নিয়ে কারফিউর মধ্যে বাসায় ফিরলাম। এসে দেখি ডি*সেন্ট্রি।
তখন টিভি মিডিয়া ছিল সংবাদ পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু অসুস্থতার কারণে আর টিভি অন করা হয়নি। পরদিন সকালে অফিসের ফোন পেয়ে তো আমি অবাক। বলে রাখা ভালো- ২১ জুলাই রাতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ব্রিফ করেছে নাহিদ। কিন্তু আন্দোলন স্থগিত বা বন্ধ করা হয়নি।
আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ২২ জুলাই সকাল সকালই আমার নিউজের কারণে স্বয়ং শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনিই ইন্টেলিজেন্স গ্রুপগুলোকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছেন। ওই গ্রুপগুলো থেকে অফিসে কল দিয়ে সবার আগে আমার চাকরি খেয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হলো। কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ আমার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা দাদার প্রতি। তিনি সেটি করেন নি।
বেলা ১২টার দিকে ই-ন্টেলিজেন্স গ্রুপের একজনের সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি প্রথমেই আমার এনআইডি কার্ডের নাম্বার নিলেন। জানালেন, তাদের অফিসে না গেলে ভুল বুঝাবুঝি হবে। এতে আমারই সমস্যা হবে। আমি তার সঙ্গে কথা বলে ওখানে যাই। তখন সোয়া তিনটার মতো বাজে। ঢোকার পর গেটে একবার এবং ভেতরে আরেকবার সাইন করতে হয়। ভেতর থেকে পাস নিতে যখন সাইন করছিলাম, তখন দায়িত্বরত ব্যক্তি জানালো- এখানে তো সম্পাদক লেভেলের লোকজন আসে, আপনি কেন আসলেন? তাকে বললাম, মিটিং আছে। এদিকে তার কথাটা শুনে বুক ধড়পড় করা শুরু করলো।
পাস সহ একজন এগিয়ে দিল। পাশাপাশি দুটি মিটিং রুম। মিটিং রুম-২ এর দরজা খোলা হলো। আমাকে ভেতরে বসতে বলা হলো। ছোট্ট একটা রুম। একটা মাঝারি আকারের টেবিল, একটা বড় চেয়ার আর তিনটা ছোট চেয়ার। মনে হলো, একেবারে পার্সোনাল আলাপের জন্যই রুমগুলো তৈরি করা। আমাকে রেখে দরজা লাগিয়ে ওই ব্যক্তি চলে যায়। এরপর বসে আছি, কি করব বুঝতে পারছি না। এটুকু বুঝতে পারলাম, আমার গতিবিধি নিশ্চয়ই ফলো করা হবে। সে কারণে চেয়ারে বসে একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে ছিলাম। আর ভাবছিলাম, আমার কি কি হতে পারে? বিড়বিড় করে দোয়া তো পড়ছিলামই।
যার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হলো, তিনি মিনিট দশেক পরে রুমে আসলেন। তার ব্যবহার খারাপ মনে হয়নি। তিনি মিডিয়া উইংয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি এসে আমার নিউজের পুরো ডিটেইলস জানতে চাইলেন। সবকিছু বললাম।
মূলত কয়েকটি বিষয় নিয়ে তাদের মনে সন্দেহ বাসা বাধে। উল্লেখযোগ্য হলো- আন্দোলন চলমান থাকবে এটা আমার নিজস্ব লেখা কিনা, নাহিদ প্রেস ব্রিফ করে সামনে আসার পরও আমি ভিন্ন উদ্দেশ্যে লিখেছি- সে সহ তিনজন গুমের শিকার, তিন শতাধিক নিহতের খবর ইচ্ছে করে প্রচার করেছি, ৫৯ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কের তথ্য মনগড়া ইত্যাদি।
তাকে আমি এর ব্যাখ্যা দিলাম। সবকিছুর ক্লারিফিকেশনের পর বললাম যে, ভুল হলে ওই একটাই হয়েছে- প্রেস রিলিজে উল্লেখ থাকা তিনজন গু*মের শিকার। কিন্তু আমার জায়গায় আমি ঠিক ছিলাম, কারণ আমি যখন নিউজটা সাবমিট করি, ততক্ষণ ওটাই ছিল লাস্ট আপডেট। এরপর অসুস্থতার কারণে খোঁজ নিতে না পারাকে ব্যর্থতা বিবেচনা করলে আমার কোনো দ্বিমত নেই। তবে, পত্রিকা অফিসগুলোতে রিপোর্টারের সাবমিশনের পরও নিউজ ম্যানেজমেন্ট বলে একটা বিষয় আছে, এটা তাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি বলে মনে হলো।
এরপর লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হলো। লাঞ্চের মাঝেই তার সঙ্গে কথা চললো। আন্দোলন বিষয়ে অনেক কথা হলো। কিছু বিষয় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোনো কোনো বিষয়ে নিজের অভিমত জানালেন। এর মাঝে আমার ওয়াইফ কল দিল। আমি ধরছিলাম না। বারবার কল দেওয়ায় তিনি বললেন, কল ধরেন। আমি ধরে বললাম, সম্পাদকের রুমে লাঞ্চ করছি।
যা-ই হোক, এক পর্যায়ে তিনি জানালেন, আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য আরেকজন আসবে। আমি যেন তাকে কো-অপারেট করি।
লাঞ্চ শেষে আগের মতোই একদৃষ্টিতে কখনও দরজা, কখনও বড় চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে আছি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর আরেকজন ভদ্রলোক রুমে প্রবেশ করলেন। ইয়াং, লম্বায় প্রায় ৬ ফিট। ঢুকেই রূঢ় স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নাম যেন কি? নাম বললাম। কালবেলায় কতদিন ধরে আছি জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিলাম। এর আগে কোন কোন হাউজে কাজ করেছি তার খোঁজও নিলেন। এরপর বললেন, আপনার পুরো বায়োডাটা আমি জানি, এখানে আসার আগেই আমি রিসার্চ করে এসেছি। আপনাকে কল করার পরে কোন কোন রাস্তা ঘুরে এখানে এসেছেন, সেটাও জানি।
বললেন, আমাদের এখানে মন্ত্রী-এমপিদের চায়ের দাওয়াত দিলে তারাও ভয়ে আসে না। কেন যে ভ*য় পায়, জানি না। হয়তো ভয়ের কারণও আছে। চায়ের দাওয়াত দিলে কল কেটে তারা হাজারটা চেষ্টা করেন না আসার, অথচ আপনি এসেছেন। এটা পজিটিভ নাকি নেগেটিভ? আমি বললাম, আমার কাছে তো নেগেটিভই মনে হচ্ছে।
এরপর বললেন, এখানে সকালেও দুই এমপির সঙ্গে আমার মিটিং ছিল, তাদের সঙ্গে যেই টোনে কথা বলেছি, আপনার সঙ্গেও একই টোনে আমি কথা বলব। টু দ্য পয়েন্টে উত্তর দিবেন। আপনার জন্য এক্সট্রা সময় নষ্ট করার মতো সময় আমার কাছে নেই। কারণ, আন্দোলনে কোথায় কি হচ্ছে, তার খোঁজও আমাকে রাখতে হয়। এরপর তিনি তাদের কাজ কি, সেই বিষয়ে অনেকক্ষণ কথা বললেন। নিজের কথাও টুকটাক জানালেন।
তারপর আসলেন মূল পয়েন্টে। কালবেলার ওইদিনের একটা পত্রিকা বের করলেন। আমি দেখলাম, আমার নিউজের বেশিরভাগ লাইন হাইলাইটার দিয়ে মার্ক করা। ভ*য় বাড়তে লাগলো।
প্রথমেই বললেন, এটা আপনার লেখা। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি নিউজের ইন্ট্রো পড়লেন। এরপর বললেন, আন্দোলন চলমান থাকবে, এটা কোথায় পেয়েছি? কে বলেছে? আমি বললাম, সারজিসের সঙ্গে আমার গতকাল দুপুরে কথা হয়েছে। বলল, কোনো প্রমাণ আছে। আমি বললাম আছে। এরপর তিনি বললেন, পরে শুনব।
এরপর ৫৯ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক কোথায় পেলাম, তা জিজ্ঞেস করলেন। আমি মুসাদ্দেকের ব্যাখ্যাটা দিলাম। বললেন, আপনার কাছে তাদের প্যানেলের তালিকা আছে? আমি আছে জানালে বললেন, পরে নিব।
তারপর তিনজন গুমের বিষয়টি নিয়েই ক্ষেপে গেলেন। বললেন, নাহিদ তো গতকাল ব্রিফ করলো, তারপরও কেন এটা লিখলেন? আমি তখন বললাম, এটার ব্যাখ্যা চাইলে আমাকে এক মিনিট সময় দিতে হবে। তিনি সময় দিলে আমি পুরো ঘটনা খুলে বললাম। মিডিয়া হাউজের নিউজ ম্যানেজমেন্ট ও গেটকিপিং বিষয়ে বললাম। তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে মনে হলো না। বাঁচার জন্য মানুষ কতকিছু করে! অগত্যা ক্ষমাও চাইলাম।
এরপর তিন শতাধিক মৃত্যু নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোথায় পেয়েছি? তার চোখে সবগুলো ভুল একসঙ্গে করে বললেন, এটা তো ক্রা*ইম করেছেন। আমি তাকে বললাম, রাইটআপ আমার, কিন্তু আন্দোলনকারীদের বিবৃতি এবং তাদের মন্তব্যই নিউজে যোগ করা হয়েছে। নিজের থেকে একটা তথ্যও যোগ করিনি। তখন আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা আপনি বলুন তো, আসলেই কতজন মানুষ মারা গেছে? বললাম, আমরা তো ক্রসচেকের বাইরে কোনো কথা বলতে পারি না। সে অনুযায়ী দেড়শ'র কিছু বেশি হবে। বলল, আপনি আসলে জানেনই না।
এর মাঝে আবারও ওয়াইফ কল দিল, বললাম- দাদার রুমে মিটিংয়ে আছি। সম্পাদকদের সঙ্গে ইন্টেলিজেন্স গ্রুপগুলো নিজেদের স্বার্থে যোগাযোগ রাখে। সে কারণে প্রথম যার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল, তাকে সম্পাদক বারবার কল দিচ্ছিলেন আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য। তার অ*স্থিরতায় ওই ব্যক্তি আমাকে জে*রা করা ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলেন আর কতক্ষণ লাগবে? তিনি জানালেন, ৫-৭ মিনিট। বাইরের ওই ব্যক্তি আমার অবস্থা জানতে চান? ভেতরের ব্যক্তি জানান, এখনও বেঁচে আছে।
এরপর ওই ব্যক্তি আমার কাছে সারজিসের সঙ্গে কি কথা হয়েছে শোনাতে বলেন। আমি শোনানোর পর বলেন, কেন জানি মনে হচ্ছে আপনিই সারজিসকে কমান্ড দিচ্ছেন? আমি বললাম, রেকর্ডারে সমস্যার কারণে আমার ভয়েসটা লাউড আর সারজিসের কথা ক্লিয়ার না। সে কারণেই আমি সারজিস যা যা বলেছে, তা রিপিট করে জানতে চেয়েছি, আপনি কি এটা বলছেন? সে বলেছে, হ্যাঁ। এখানে কমান্ডের কোনো বিষয় নেই।
এরপর তিনি বিগত দুই দিনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমার কি কি কথা হয়েছে, তার রেকর্ড জমা নিলেন। আরও নিলেন ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের তালিকা। এগুলোর পাশাপাশি পিডিএফ করে নিলেন যেসব নম্বর থেকে প্রেস রিলিজ আসে সেই নম্বর ও প্রেস রিলিজগুলো।
সর্বশেষ বললেন, আপনার তথ্যগুলো আমরা চেক করব। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে আমরা আপনাকে 'টেক কেয়ার' করব। এই টেক কেয়ারকে ছোট শব্দ ভাববেন না। এটা কিন্তু অনেক বড় শব্দ। আর যদি গ*রমিল থাকে, তাহলে ধরে নেন আপনি একটা ট্র্যা*কিংয়ের মধ্যে পড়ে গেলেন। বের হওয়ার সময় বললেন, অফিসে বা বাসায় গেলে এতক্ষণ সময় কেন লাগলো জিজ্ঞেস করতে পারে, বলবেন- বসিয়ে রেখেছে অনেকক্ষণ। আর কথা হয়েছে মাত্র ১০ মিনিটের মতো।
ঘটনাচক্রে অফিসের নিউজ ম্যানেজমেন্টের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলেন তিনি। আমি বললাম, পুরোটাই অ্যাজামশন। আমার মতের সঙ্গে না মেলার সম্ভাবনাই বেশি। সন্তুষ্ট না হয়ে বললেন, যে হাউজে কাজ করি, সে হাউজের নিউজ ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা থাকবে না কেন? আমি বললাম, প্রফেশনাল কাজ ছাড়া তাদের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। সে কারণে জানার প্রয়োজন হয়নি। এরপর ক্যাম্পাস রিপোর্টারের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলো, আমি একই উত্তর দিলাম।
যা-ই হোক, বুক ধড়পড় করা সেই সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় পর ওই অফিস থেকে বের হলাম। পানি আর এক কাপ চা খেলাম। তারিফুল ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
বের হওয়ার পর ওয়াইফ আবার কল দিল। তখন গাড়িতে। কি বলব, বুঝতে পারছিলাম না। সমকালের একটা মাইক্রো পাশ দিয়ে ক্রস করে চলে গেল। তখন ওয়াইফকে বললাম, অফিসের অ্যাসাইনমেন্টে বেরিয়েছি। সবকিছুর জন্য তার কাছে সরি।
ছোট্ট ঘটনাটি অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ আমার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা দাদার প্রতি। উনি না থাকলে হয়তো ফিরে আসা হতো না।
আমি জানি- অলরেডি আমার নামে একটা ফাইল জমা হয়ে গেছে এবং আমি অলটাইম ট্র্যাকিংয়ের মধ্যে আছি। তবু এটা শুকরিয়া, এখনও আলো-বাতাস দেখছি...