২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৩৩

গ্যাস সংকটে বন্ধ ৪ ইউরিয়া কারখানা, উদ্যোগ সার আমদানির 

বোরো ক্ষেতে কৃষকের ইউরিয়া সার ছিটানোর দৃশ্য  © সংগৃহীত

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি ইউরিয়া কারখানার মধ্যে চারটিই এখন বন্ধ রয়েছে গ্যাস সংকটের কারণে। ফলে চলতি আমন ও তৎপরবর্তী বোরো মৌসুমে ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

প্রতিবছর আমন ও বোরো মৌসুমে দেশে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ইউরিয়া সারের মজুদ আছে প্রায় পাঁচ লাখ টন। মজুদকৃত এই সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া দিয়ে দিয়ে মাত্র দুই মাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ইউরিয়ার সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকলে আগামী ডিসেম্বরের দিকে ব্যাপক সংকট দেখা দিতে পারে।

বঙ্গোপসাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশে ইউরিয়া উৎপাদনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণেই মূলত এলএনজি টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতো বন্ধ হয়ে যাওয়া টার্মিনালটি থেকে। তবে ওই টার্মিনাল মেরামতের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো উৎপাদন শুরু করা যায়নি গ্যাস সরবরাহ শুরু না হওয়ায়।

এদিকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) শফিউল আজম বলেন, এলএনজি না থাকায় চট্টগ্রামে সার কারখানার জন্য পেট্রোবাংলা ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ করেছে। ওই অংশের মধ্যে ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চট্টগ্রামে অবস্থিত জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিকে (কাফকো) দেওয়া হচ্ছে।

চলতি সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি কারখানার মধ্যে শুধু ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার জাতীয় গ্রিড থেকে প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছে। বাকি চারটি পুরোপুরি বন্ধ।

বিসিআইসির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গত জানুয়ারি থেকে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি ও ফেব্রুয়ারি থেকে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ও যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে, বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে মূলত সরকারি সিদ্ধান্তেই।

তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ইউরিয়া সারের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এই চাহিদা পূরণে আমদানি পরিকল্পনার প্রাথমিক সব প্রস্তুতি থাকলেও ব্যাংকে ডলার ঘাটতির কারণে এলসি খোলা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

গত ১ সেপ্টেম্বর প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া আমদানির জন্য বিসিআইসি ঋণপত্র খুলতে চেয়েছিল সোনালী ব্যাংকের কাছে। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব ও কাতার থেকে ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০ হাজার টন বাল্ক দানাদার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।

সাইদুর রহমান বলেন, 'সব সার কারখানা চালু থাকলে এই মুহূর্তে আমদানির কোনো দরকারই হতো না।'

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি সার কারখানা থেকে বার্ষিক প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদিত হয়। তবে আমাদের চাহিদা বার্ষিক প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া।