২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:৩৭

আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয়: ইউট্যাব

ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গাইবান্ধা ও রাজশাহীতে পিটিয়ে ছাত্র-যুবকদেরকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।

সংগঠনটি মনে করে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অন্যায়। মানুষের মাঝে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। যা খুবই উদ্বেগজনক এবং সেটি কাম্য নয়। এমন অবস্থায় অবিলম্বে তা রুখে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ইউট্যাব। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। রাজনীতি বন্ধ থাকলে পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান ঘটবে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ঘাপটি মেরে আছে। রাজনীতির বন্ধের সুবিধা নিয়ে আবারও তাদের পুনর্বাসন ঘটবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। 

আরও পড়ুন: গণপিটুনিতে জড়িতদের বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা ঢাবির

ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের অবসানের পর দেশবাসী স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে উৎখাত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষিপ্রতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের বিষয়ে জনগণকে এখনো স্পষ্ট করেনি। বরং ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গাইবান্ধা ও রাজশাহীতে পিটিয়ে ছাত্র-যুবকদের হত্যা করা হয়েছে। এখনও দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে তোফাজ্জল নামে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে মানিব্যাগ ও মোবাইল চুরির অভিযোগে যেভাবে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা তাতে হতভম্ব এবং বিস্মিত। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত পীড়াদায়ক এবং বেআইনি। অথচ উচিত ছিল ওই ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের একজন নেতার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আসলে এভাবে ফ্যাসিবাদের ধারক ও বাহকরা ঘাপটি মেরে আছেন। তারা সময় সুযোগ বুঝে বিভিন্ন বেআইনি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ছাত্রজনতার রক্তাক্ত বিজয়কে নস্যাৎ করতে চায়। তাছাড়া মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল প্রশাসনের নির্লিপ্ততা আমাদেরকে হতবাক করেছে। এ জন্য আমরা হল প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করছে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের যে-সব প্রেতাত্মা ও দোসর এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

আরও পড়ুন: জাবিতে পিটিয়ে হত্যা: ধামরাইয়ের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আটক

নেতৃদ্বয় বলেন, কেউ অন্যায় করলে বা অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তির বিচারের বিধান রয়েছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। কোনো ব্যক্তি অন্যায় এবং অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে; কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। আমরা অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা এবং কালক্ষেপণ না করে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের আলোচনা শুরুর আহ্বান জানাই।

নেতৃদ্বয় আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং অসাংবিধানিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতির জন্ম। বাংলাদেশের সংবিধানও প্রত্যেকটি নাগরিক-কে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে তো আর মতপ্রকাশের সুযোগ থাকবে না। সুতরাং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের যে সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়েছে আমরা সেখান থেকে সরে আসার আহ্বান জানাই।