১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৪৫

গোলাপগঞ্জে নদী গর্ভে বিলীন পাঁচশো বছরের পুরনো মসজিদ

নদী গর্ভে বিলীন পাঁচশো বছরের পুরনো মসজিদ   © টিডিসি ফটো

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নে রুস্তমপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন জামে মসজিদ সুরমা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে এখন নদীগর্ভে।

গত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) যুহরের নামাজের সময় হঠাৎ বড় গম্বুজ সহ মসজিদে বেশির ভাগ অংশ নদীগর্ভে চলে যায়। জানা যায়,  দীর্ঘদিন দিন থেকে মসজিদটি ভাঙনের কবলে পড়েছিল, অবশেষে অস্তিত্ব হারালো ঐতিহাসিক এই মসজিদ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এশিয়ার প্রাচীনতম মসজিদ গুলোর মধ্যে এটি একটি। অনেকের ধারণা মসজিদটির বয়স আনুমানিক চার-পাঁচ শতবর্ষ হতে পারে। তবে কেউ এই মসজিদ স্থাপনের সঠিক সাল বলতে পারেননি। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের দেয়াল ও ৩টি গম্বুজের অভিনব সব কারুকাজ চীনামাটির ভাঙা টুকরা দিয়ে বিভিন্ন রঙের নকশা মুসল্লিদের মুগ্ধ করতো।

রুস্তমপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন নামের একজন প্রবীণ জানান, এটি নাকি তার দাদাও তৎকালীন সময়ে পুরাতন মসজিদ হিসেবে জানতেন। তার দাবি মসজিদটি'র বয়স পাঁচশ বছরের কম হবে না। তিনি বলেন, প্রায় ৩০ বছর থেকে  মসজিদটি রক্ষা করার জন্য এলাকাবাসী অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু গ্রামের মানুষের পক্ষে নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। এর জন্য গ্রামবাসী নতুন করে আরেকটি জামে মসজিদ তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, এখানে অনেক আগ থেকেই জুমার নামাজ হয়না। তবে  দুইতিন দিন আগেও মসজিদের ভিতরে ওয়াক্তিয়া নামাজ চলমান ছিলো। কিন্তু এটি ভাঙার পর ভিতরে নামাজ পড়া সম্ভব না হলেও মসজিদটির ইমামের কক্ষে বর্তমানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ চলমান রয়েছে।  আশপাশের বাড়ির কিছু মুসল্লিরা এখানে নামাজ পড়েন।

সাইম আহমদ নামের গ্রামের এক তরুণ বলেন, ছোট বেলা আমি মসজিদের মক্তবে পড়েছি এখানে রমজান মাসে সহীহ কুরআন শিক্ষার ক্লাস নেওয়া হতো। তখন থেকেই মসজিদটির ফাটল দেখে আসছি। তিনি আরও বলেন, মসজিদের আঙিনা ও সীমানা প্রাচীর অনেক আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অবশেষে সম্প্রতি মসজিদটিও হারিয়ে গেল সুরমার ভাঙনে। 

শাহিন আহমদ নামের গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, মসজিদটি রক্ষা করতে এলাকাবাসী মসজিদের ২০-২৫ লক্ষ টাকার নিজ সম্পত্তি বিক্রি করে নদী ভাঙন রোধে এখানে পাথর ফেলা সহ অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। আমরা এলাকাবাসী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও এই আসনের সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদকে অনেক বার এখানে এনে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি আশ্বাস দিয়েও কোনো পদক্ষেপ নেননি। এভাবেই হারিয়ে গেছে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি। তার মতে এই এলাকায় নদী ভাঙনের প্রধান কারণ হচ্ছে  অপরিকল্পিত বালু উত্তলন।

এই গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়জুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেও মসজিদটি রক্ষা করতে পারিনি। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে এখানে এনে অনেকবার  দৃষ্টি আকর্ষণ করেও এবিষয়ে তার কোনো আন্তরিকতা দেখিনি। উপজেলা প্রশাসন থেকে মাত্র কিছু বস্তা জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল কিন্তু এতে কিছুই হয়নি।

এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দার দাবি, নদীতীরবর্তী এলাকা থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তলন বন্ধ করা গেলে এবং সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এলাকার এই মসজিদ সহ অনেক ঘরবাড়ি রক্ষা করা যেত। কালের সাক্ষী হয়ে থেকে যেত ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি।