‘এক কাপড়ে আমাদের ফেরত আসতে হয়েছে’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গত ১৯ জুলাই রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। তাদের মধ্যে ২১৮ জনকে আটক করে সৌদি পুলিশ। পরে সবাইকে ৪১ দিনের কারাভোগের পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
শাস্তি পাওয়া এসব প্রবাসী এবার আন্দোলনে নেমেছেন। তারা সৌদি আরবে ফেরত যেতে চান এবং পুনর্বাসনসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘সৌদি আরব ফেরত প্রবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এসব দাবি জানান।
প্রবাসীরা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিলাম। যার কারণে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এক কাপড়ে আমাদের ফেরত আসতে হয়েছে। আমরা পুনরায় সৌদি আরবে কাজে ফিরে যেতে চাই। সে জন্য বর্তমান সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
আব্দুল আজিজ নামের এক প্রবাসী বলেন, দেশের যেকোনো সংকটে প্রবাসীদের উদ্বেগ থাকে বেশি। গত জুলাই মাসে সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর দমন-নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ দেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা ‘রেমিট্যান্স শাডডাউন’ কর্মসূচি পালন শুরু করে। পাশাপাশি বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও অংশ নেন। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের প্রবাসীরা আন্দোলনে শামিল হলে সেসব দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রোষানলে পড়েন। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী মামলা ও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হন। পলাতক স্বৈরাচারের অসহযোগিতার কারণে অনেক প্রবাসীকে জেল খাটতে হয়েছে। অনেককে জেল ভোগের পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
প্রবাসী আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ১৯ জুলাই সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করায় ২২৮ জন বাংলাদেশি প্রবাসীকে সে দেশের কর্তৃপক্ষ কারাগারে পাঠায়। সেখানেও আমাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন-জুলুম করা হয়েছে। ৪১ দিন জেল খাটার পর আমাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে আরব আমিরাতের প্রবাসীদের সমস্যা কিছুটা লাঘব হলেও, সৌদি ফেরত ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের উদ্ধার বা তাদের সহযোগিতায় কোনো পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। তাই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পুনর্বাসনসহ ৫ দফা দাবি জানাচ্ছি।
প্রবাসীদের ৫ দাবি
১. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করার কারণে সৌদি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মামলা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করানো।
২. সৌদি ফেরত প্রবাসীদের সরকারি খরচে সে দেশে পুনরায় পাঠানো অথবা অন্য দেশে পাঠানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।
৩. দেশে ফেরত আসায় হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া প্রবাসীদের এককালীন নগদ সহায়তা দেওয়া।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করা পর্যন্ত দেশে কর্মসংস্থানের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
৫. সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোতে প্রবাসীবান্ধব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে রাজতন্ত্র প্রচলন থাকায় দেশটিতে রাজপরিবার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও বিচারব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণে সভা-সমাবেশ কিংবা কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম সে দেশে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।