১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:১৬

‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলেন নাহিদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম  © সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ও ‘সাহসী’ স্লোগানগুলো একটি ছিল ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’। যদিও এ স্লোগান নিয়ে নানা পর্যায়ে নানা আঙ্গিকে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। রাজাকার শব্দের কোন প্রাসঙ্গিকতা এ আন্দোলনে না থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিদ্রুপ করতে ও শিক্ষার্থীদের ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন দমন যে সম্ভব নয় তা বোঝাতেই এ স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রবিবার (১৫  সেপ্টেম্বর) সকালে দেয়া এক পোস্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন তিনি। 

নাহিদ লেখেন, 'তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার' এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সাহসী স্লোগান ছিলো। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যে বিভাজনের রাজনীতি ছিল তা এই স্লোগানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছিলো সেই রাতে। আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ সেই রাতেই ভেঙে গেছিলো। অস্ত্র ও বুলেটের মাধ্যমে আরো কয়েকটা দিন টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা ছিল কেবল।

আরও পড়ুন : শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম কাজ বাংলাদেশ সংস্কার: উপদেষ্টা নাহিদ

তিনি আরও লেখেন, ইতিহাস ত একরোখা কোনো বিষয় না। 'তুই রাজাকার, তুই রাজাকার' ; 'আমি নই, তুমি নই; রাজাকার, রাজাকার' স্লোগানও সেই রাতে বহুবার দেওয়া হইছে। আন্দোলনে বহুস্রোত ও কন্ঠস্বর এসে মিলেছে৷ সবাই সবসময় এক বক্তব্য ধারণ করেছে এরকম নয়। বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ীও বক্তব্য-কর্মকৌশল বদল হইছে বহুবার। 'বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই' স্লোগানও হইছে। 'স্মার্ট বাংলাদেশে'র পক্ষেও বহু গুণগান গাওয়া হইছে একসময়। ১৮ সালেও হাসিনা ও মুজিবের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন হইছে। পরে বুকে রাজাকার লিখে সেই আন্দোলন গতি পাইছে। একটা আন্দোলনে অনেক ডাইমেনশন থাকে এবং বহু পরস্পর বিরোধী ঘটনাও একসঙ্গে ঘটতে পারে। এই সামগ্রিকতাকে ধারণ করেই প্রকৃত ইতিহাস রচিত হয়। রাজাকার ইস্যুটিকে পরিকল্পিতভাবে প্রাসঙ্গিক করা হয়েছিল এবং শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার প্রস্তুতি নেওয়া হইছিল। এবং তার ফলশ্রুতিতেই পরদিন মিছিলে হামলা করা হয়। আর এ আন্দোলনে যেহেতু নারী শিক্ষার্থীরা ছিল মূল শক্তি তাই মেয়েদের উপর নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়। তারপরের ঘটনা সকলেই জানেন। ফ্যাসিস্টদের শেষ রক্ষা হয়নি।

আরও পড়ুন : আখতার-নাহিদ-আসিফের ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সকল কার্যক্রম স্থগিত

নাহিদ আরও জানান, ১৫ তারিখ সকালে আমাকে বহু মিডিয়া ফেইস করতে হইছে রাজাকার স্লোগানের ব্যাখ্যা দিয়ে। আমার ব্যাখ্যাটি ছিল অনেকটা এরকম—‘রাজাকার শব্দের কোনো প্রাসঙ্গিকতা এই আন্দোলনে ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাজাকার ইস্যুর অবতারণা করেছেন এবং শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে অপমান করেছেন। প্রতিউত্তরে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে 'রাজাকার' বলে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে বিদ্রুপ করেছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ট্যাগ দিয়ে এই আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। মূলত আন্দোলনকে দমন করার জন্যই রাজাকার ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে এ বক্তব্য অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।’