‘দেশের মানুষের শত্রু আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গবেষক ও এক্টিভিস্ট আলী আহসান মো. জুনায়েদ বলেছেন, জুলাই বিপ্লব শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে এখানে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সব ধর্মের, বর্ণের, পেশার, মানুষের অন্তর্ভুক্তি এই বিপ্লবকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে তুলেছে। এই জুলাই বিপ্লবে আমাদের আবেগ এবং আকাঙ্ক্ষার বিকাশ ঘটেছে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তৎপরবর্তী অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে দেয়া বক্তব্য তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন মনে করতেন তার বিকল্প সে ছাড়া আর কেউ নেই। এজন্য সে নিজের ইচ্ছামত রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মানুষের যখন ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে গেছে এবং প্রতিবাদ শুরু করেছে, তখনই হাসিনার পতন হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের ট্যাগ দিয়েই মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে এতদিন।
আরও পড়ুন : জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. ইউনূস, সেক্রেটারি স্নিগ্ধ
তিনি বলেন, ১৭ তারিখ আমাদের এই আন্দোলন অনেকটা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলনকে সতেজ করে তুলেছিল। তাদের অবদানও কম নয়। বিনা অপরাধে নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করেছে সরকার। আমাদের জানতে হবে কারা আমাদের শত্রু, কারা এ দেশের শত্রু। এ দেশের মানুষের শত্রু হলো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ। আন্দোলন চলাকালীন যে যার সাধ্যমত মিছিলে গিয়েছিল। মা-বাবার দোয়া আমাদের সবচেয়ে বেশি শক্তি যুগিয়েছিল ওই সময়।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক শহীদ ভাইবোনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। যথাযথ সময়ে বিচার প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার যথাযথ সংস্কার না করতে পারলে বিভাজনের রাজনীতি তৈরি হবে। আমরা পেছনের দিকে এগোতে চাই না, আমাদের যে কথা বলার স্বাধীনতা তৈরি হয়েছে, এটা সবসময় ধরে রাখতে হবে। কেউ যদি আওয়ামী লীগের মত রাজনীতি শুরু করে,তাহলে তাদেরকে দমন করতে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন : জুলাই বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড নিয়ে যা জানালেন সাইয়েদ আবদুল্লাহ
একই অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী জান্নাতুল আদনিন তাজরি বলেন, আমি যে রাজনীতি দেখে বড় হয়েছি,সেখানে হাসিনাকে ছাড়া কাউকে দেখিনি। হাসিনা পরবর্তী যে সরকার আসবে, সে যদি একই কাজ করে তাহলে তাকে শক্তহাতে দমন করা হবে। শেখ হাসিনা প্রথমত চেয়েছিলেন, রাজনৈতিকভাবে বিচারব্যবস্থা দূর্বল করার। আওয়ামী লীগের সাথে যোগসূত্র না থাকার কারণে অনেকেই বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পানুনি। তখন আমাদের মানবাধিকার বলতে কিছুই ছিল না। এ সরকার পূর্বে কাদের নিয়োগ নিয়েছে, তাদেরকে শনাক্ত করতে হবে, পরবর্তীতে যেনো দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া না হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বিচারহীনতা,জোরজবরদস্তি করে মানুষের সম্পদ লুফে নিয়েছে এই সরকার। কিন্তু এখন আমরা বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি।
তিনি বলেন,আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখনো রাজনীতি করে। শিক্ষকরা রাজনীতি না ছাড়লে শিক্ষার্থীরাও এটা ছাড়তে পারবে না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে জনগণের মতামতকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আগে আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে।
পিএইচডি গবেষক ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খন্দকার রাকীব বলেন, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের ৫ মিলিয়ন মানুষকে মামলা দিয়েছিল হাসিনা সরকার। যা আয়ারল্যান্ডের জনসংখ্যার সমান। এভাবেই মানুষ হত্যা করে,জিম্মি করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল সে। পরবর্তী এ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছাত্রজনতার আন্দোলন সফল হয়েছিল কারণ মানুষের ভয়ের পর্দা সরে গিয়েছিল।
এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় লিয়াজো কমিটির সদস্য মামুন আব্দুল্লাহিলসহ অনেকে।