১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪

৪৩ বছর পর রেকর্ড বৃষ্টিপাতে প্লাবিত কক্সবাজার, ফের বন্যার শঙ্কা

রেকর্ড বৃষ্টিপাতে প্লাবিত কক্সবাজার, ফের বন্যার শঙ্কা  © সংগৃহীত

বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো জেলায় ২৪ ঘণ্টায় চতুর্থ সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল তিনটা থেকে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনটা পর্যন্ত জেলাটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০১ মিলিমিটার। অতিবৃষ্টি ও ঢলের কারণে পাহাড় ধসে দুই উপজেলায় মারা গেছেন ছয়জন।

কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরও। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে লঘুচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: কক্সবাজারে পাহাড়ধসে ৬ জনের মৃত্যু

পাহাড় ধসের ঘটনা দুটি ঘটেছে কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়ন ও উখিয়া উপজেলার হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বৃষ্টির কারণে ঝিলংজা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে মা ও দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটেছে। তারা হলেন আঁখি মনি এবং তার দুই মেয়ে মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম। আঁখি মনির স্বামী মিজানুর রহমান এ ঘটনায় আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়ে মৃত্যু হয় বাবা ও দুই সন্তানের। তারা হলেন আবদুর রহিম, আবদুল হাফেজ এবং আবদুল ওয়াহেদ।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপ শুক্রবার সকালে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেয়। বিকেল নাগাদ সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, কেবল বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা থেকে শুক্রবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে তারা। কক্সবাজারের জন্য একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড এটি। এর আগে, ২০১৫ সালে ৪৬৭ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বদক্ষিণের জেলাটিতে।

২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ডটি ১৯৮১ সালের। ওই বছরের ১৮ই জুলাই নোয়াখালীতে ৫২০ মি.মি. বৃষ্টিপাতের হিসাব জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর। ১৯৭৬ সালের সাতই সেপ্টেম্বর তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমার শ্রীমঙ্গলে ৫১৮ মি. মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। আর ১৯৮৩ সালের চৌঠা অগাস্ট চট্টগ্রামে ৫১১ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের নয় উপজেলার বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জেলাশহরের সড়কগুলোর কোথাও কোথাও হাঁটুপানি। অতিবৃষ্টির সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হয়েছে অনেক বাড়ি ঘর। এতে স্থানীয় জনজীবনে যেমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরাও।


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শুক্রবার মৌসুমী বন্যা এবং বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্যে জানানো হয়, ‘চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী ও গোমতী নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, অপরদিকে হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বরাত দিয়ে বলা হয়, দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতার প্রেক্ষিতে আগামী দুইদিন চট্টগ্রাম বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

তবে জোরালো বন্যার শঙ্কা কম উল্লেখ করে সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া বলেন, বন্যা হলেও স্বল্পমেয়াদী হবে।

অর্থাৎ এর স্থায়িত্ব দুই তিনদিনের বেশি হবে না। তাছাড়াপ্লাবনের শঙ্কা কক্সবাজার ও বান্দরবানের দিকে যতটা প্রকট ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলে ততটা নয়। ফেনী-নোয়াখালীর মানুষ এখনো কয়েকদিন আগের ভয়াবহ বন্যার পর পুনর্বাসন পর্যায়ে রয়েছেন। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে। দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানিই এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]