১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:০৯

জন্মনিবন্ধনে সই দিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

নুরুল আবছার  © সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (একাডেমিক সুপারভাইজার) নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধন ফরমে সই করে সেবাপ্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘুষ নেওয়ার এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষসহ স্কুলের অভিভাবকদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়।

অভিযোগ উঠেছে, তিনি টেকনাফ উপজেলার একই পদে প্রায় ১৬ বছর। বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের ফলে ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতায় জর্জরিত হয়ে গেছেন।

সূত্র জানায়, টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নূরুল আবছার ২০০৯ সালের দিকে টেকনাফে যোগদানের পর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৌশলে সখ্য গড়ে তোলে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ালেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। তবে চাপের মুখে ২০১২ সালের দিকে বান্দরবানে শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও কয়েক মাসের মাথায় উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি বদির ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ফের বদলি হয়ে টেকনাফ ফিরে আসেন।

এ ছাড়া কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টারের নামে উপজেলা মার্কেটে জমি বরাদ্দ নিয়ে দোকানঘর বানিয়ে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে পাশাপাশি সাতকানিয়া, বান্দরবানে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রতিটি ভোটার ও জন্মনিবন্ধন ফরমের সইয়ের বিপরীতে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হাতিয়ে নেন।

গত বছর উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য ১৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসএডিপি) প্রকল্পের আওতায় ৪৫ লাখ টাকা অনুদান দেয়। ওই বরাদ্দ থেকে ওপর মহলের নাম করে প্রতিটি স্কুলের ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। এ সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বেকায়দায় পড়লেও তা আবার সামলে নেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তিনি একাডেমি সুপারভাইজার হলেও তার মূল দায়িত্ব এড়িয়ে গত এক যুগ ধরেই কর্মসৃজন প্রকল্পের ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করে সময় পার করছেন। রয়েছেন জন্মনিবন্ধন কমিটির সচিবের দায়িত্বে। উপজেলার পরিষদের পেছনে বাসায় বাসা ভাড়া নিয়ে সকাল-বিকাল কোচিং সেন্টার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং জন্মনিবন্ধনের সেবাপ্রার্থী এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সেখানে তিনি ফাইলে স্বাক্ষরের বিনিময়ে টাকা নিয়ে পকেটে ঢোকাচ্ছেন। এটা তার ঘুষ-বাণিজ্যের সামান্য একটি অংশ মাত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, একাডেমির সুপারভাইজার নুরুল আবছার টেকনাফ উপজেলার প্রতিটি স্কুল ও মাদ্রাসা  ভিজিটের সময় দুই থেকে তিন হাজার টাকা পরিদর্শন ফির নাম করে আদায় করেন, যা বিভিন্ন স্কুলের ভাউচারগুলো দেখলে প্রমাণিত হবে। তিনি যেহেতু শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে, তাই প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে পারে না কেউ। 

শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল্লাহ জানান, একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার ওপরের মহলের নাম করে সবার কাছ থেকে টাকা আদায় করার ফলে তিনি অনুদানের টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন।

অভিযোগ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এসব অভিযোগের ব্যাপারে কিছুই জানি না। এমনিতেও বদলির জন্য চেষ্টা করছি।’

ঘুষ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কথা বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ জানান।

মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক প্রফেসর নারায়ন বলেন, কোচিং ও ঘুষ এবং দায়িত্বের প্রতি অবহেলা এসব ঘটনা ছাড় দেওয়া যায় না। তার বিরুদ্ধে উত্তাপিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে কর্মস্থল থেকে সরিয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, একাডেমি সুপার ভাইজারকে এ ঘটনায় আপাতত তার কর্মস্থলে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিসি স্যারসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।