শ্রমিক-মালিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে: ড. ইউনূস
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ PM , আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ PM
গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতার মধ্যেই কলকারখানাসহ সকল ক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘আমার একটা বড় আশা, যে মেয়াদকালে আমরা এখানে থাকব, সেই সময়ে শ্রমিক-মালিকের সম্পর্কটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা হবে।’ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জেনেভা কনভেনশনে যোগদানের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা বহুদিন পড়ে আছে, আমরা জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারি নাই। সবাই যখন একটা টিম হলাম, শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই যখন টিম হলাম ওটাও আমরা করে ফেলব।’
তিনি বলেন, ওটা না করলে সামনে এগোনো কষ্ট হবে। যেখানেই যাবেন এটা বাধা দেবে। পশ্চিমারা বলছে, তোমরা শ্রমিকদের যা শর্ত-প্রাপ্য এগুলোতে সই করছ না। কাজেই যদি আমাদের এগোতে হয়, পরিষ্কারভাবে হতে হবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সাহস দেন, এগিয়ে আসেন, আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করে ফেলি।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চিন্তা করে দেখুন, কী এই সুযোগ। সমস্ত কিছু থেকে আপনি মুক্ত। অতীত আপনাকে আর টানবে না। আপনি নতুনভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন, নতুনভাবে অগ্রসর হবেন। নতুন করে যে স্বপ্ন তাঁরা আমাদের মনে জাগিয়ে দিয়েছে, সেটা যদি আপনার মনে রেখাপাত করে তাহলে সে স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এই সুযোগ আর কখনো আসে কি না জানি না। এই সুযোগকে আমরা যেন হারিয়ে না ফেলি। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে আমরা একযোগে এই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই—সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা সবাই এক জোট, এক টিম। এটা একটা কমপ্যাক্ট টিম। আপনারা সেই টিমের সদস্য। যেটুকু সময় আমরা এই দায়িত্বে আছি, আমরা টিম হিসেবে কাজ করতে চাই।’
তৈরি পোশাক শিল্পকে বিশ্বের এক নম্বরে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে দুই নম্বরে আছি। আমাদের মেয়াদকালে যদি আপনারা এক নম্বরে নিয়ে যেতে পারেন আমরাও স্মরণ করব, যাক বাবা একটা কিছু করেছি তো। সবকিছু আমরা জানি না, আমাদের অভিজ্ঞতা নাই। কিন্তু একযোগে কাজ করলে অভিজ্ঞতা এসে যাবে। সবার মিলে যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা কাজ করব।’
ইউরোপ-আমেরিকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজকে ধরনা দেই ব্যবসায়ীদের কাছে যারা ইউরোপে আছে, আমেরিকাতে আছে তাঁদের কাছে। তাঁরাও কৌতূহল নিয়ে দেখছে আমাদের এখানে কী হচ্ছে। তাঁদের আমরা ডেকে আনতে পারি এখানে আসুন তোমরাও শরিক হও এর মধ্যে। আমাদের সুযোগ দাও একবার যাতে করে আমরা যে পরিধিতে আছি সেখান থেকে আরও ওপরে চলে যেতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আমাদের এখনো দাও নাই। বরং কথা হচ্ছে আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে গেলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা হারিয়ে ফেলব। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিযোগী হওয়ার জন্য আমরা সামর্থ্য অর্জন করতে চাই। আমরা পেছনে থাকতে চাই না। সেই জন্য তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছি, লুৎফে সিদ্দিকী।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘মূল লক্ষ্য যে কয়টা দিন আছি, আমরা এক সঙ্গে কাজ করব। এই নতুন বাংলাদেশের জন্য যা প্রয়োজন তাই করব। যেন বলে যেতে পারি, এই আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগ পূর্ণ ব্যবহার করেছি, আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে নতুন তরতাজা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আর পচন নয়, আমরা সুস্থ জাতি হিসেবে, সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা যদি মন ঠিক করেন, খুব দ্রুত নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। চলেন এক সঙ্গে কাজ করি আমরা।’
ছাত্র-জনতার লক্ষ্য ছিল, একটা নতুন বাংলাদেশ হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটা নতুন সুযোগ পেলাম। এই সুযোগ না আসলে আমাদের যে পচন ধরেছিল, সে পচন থেকে আমাদের মুক্তির কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না, হঠাৎ করে সমস্ত বাধা আমাদের কাছ থেকে চলে গেল।’
নতুন বাংলাদেশ গড়তে গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া শত শত ছাত্র-জনতার কথা স্মরণ করিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে যারা সামনে বসে আছেন তারা বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা। এই বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা ওই যুবককে যে প্রাণ দিয়েছে তার কাছে কী শপথ নেবে? যে স্বপ্নের পেছনে গিয়ে তুমি প্রাণ দিয়েছ, যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার, সে নতুন বাংলাদেশ গড়বই। এই হবে আমাদের শপথ। এই সুযোগ জাতির জীবনে বারে বারে আসে না।’