শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র কোথায়, জানতে চান ফরহাদ মজহার
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ঘটনার তিনদিন পর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। পরবর্তীতে তার পদত্যাগ করা না করা নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেননি বলে দাবিও করেছিলেন তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।
এদিকে, আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র কোথায় রয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছে সেই পদত্যাগপত্রটা কোথায়? জনপ্রশাসন শেখ হাসিনা শাসনের ভিত্তি ছিল। আপনারা কেউ বলেননি জনপ্রশাসন থেকে ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে। এই আলোচনা সভায় আয়োজন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আন্দোলন ঢাকা কলেজ শাখা।
‘অভ্যুত্থান পরবর্তী কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার বলেন, তরুণদের রাজনীতি শিখতে হবে, বুঝতে হবে। জনগণ যখন উত্থিত হয় তখন তাকে গণতন্ত্র বলে। গণতন্ত্রের আইন পরিভাষা জনগণের অভিব্যক্তি। আমাদের বিভিন্ন দোষ আছে সেগুলো কাটাতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে রাষ্ট্র ও সরকার এক নয়। বিগত সময়ে পুলিশ সরকারের ছিল, রাষ্ট্রের নয়। রাষ্ট্র গঠন করতে হবে আগে। আমরা এখনো রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। ১৯৭২ সালের সংবিধান পাকিস্তানের সংবিধান, আইনের ভাষায়। এই সংবিধানকে যখন ছুড়ে ফেলে দিতে হবে তখন আপনারা বসে আছেন। এখন আমাদের প্রধান কাজ হওয়া দরকার ছিল সংবিধান সংস্কার।
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তিনটি মূলনীতির প্রস্তাব করে তিনি বলেন, এক. রাষ্ট্রের কোন অধিকার থাকবে না যাতে ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। দুই. আমরা এমন রাষ্ট্র চাই যা সামষ্টিক স্বার্থ রক্ষা করবে। তিন. রাষ্ট্র প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও জ্ঞান ও ঐতিহ্য ধ্বংস করতে পারবো না। আমরা এই তিনটি মূলনীতি চললে রাষ্ট্রের সকল নীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশের তরুণরা অভূত এক কাজ করেছে। ফরাসি বিপ্লবের থেকে এ বিপ্লব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিপ্লব আপনারা ব্যর্থতায় পরিণতি হতে দিবেন না।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামিক স্কলার ও দার্শনিক মুসা আল হাফিজ বলেন, বাঙালির প্রকৃত ইতিহাস আমাদের জানতে হবে, তাহলে কেউ কোন চেতনা এ জাতির উপর চাপিয়ে দিয়ে স্বৈরাচার ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবে না। পূর্ব ভারতের জনগোষ্ঠী তথা বাঙালিরা অত্যাচারী আর্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫০০ বছর সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। এজন্য আর্যরা আমাদের দুর্বৃত্ত বলেছে। এ জনপদের মানুষ সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল। গণভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। দেশের জন্য স্বাধীন কমিশন তৈরি করতে হবে। দলীয় কোনো সরকার আসলে এসব সংস্কার করতে পারবে না। এজন্য এ সরকারকে সংস্কারের জন্য সময় দিতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অনুভূতি ব্যক্ত করেন ৫ আগস্টে বিজয় মিছিল থেকে পুলিশের গুলিতে শহীদ সাব্বির হোসেন রনির বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন কবি ও সাহিত্যিক আব্দুল হাই শিকদার, ডেইলি স্টারের বাংলা বিভাগের প্রধান ইমরান মাহফুজ, হিউম্যান রাইট অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ।
আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা কলেজ অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দার। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইলিয়াস হোসাইন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মইনুল ইসলাম ও নাহিয়ান রেহমান রাহাত।