১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৫

আনন্দবাজারের ক্যাপশন— ‘সৌজন্যের ইলিশ’ আসা বন্ধ হলেও ‘দরকারি ডিম’ গেল বাংলাদেশে

ইলিশ ও ডিম  © সংগৃহীত

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা উল্লেখ করে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। হাসিনা সরকারের অতিরিক্ত ভারত ঘেঁষা নীতির বিরোধীতার নিদর্শনস্বরূপই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে, এই ‘নীতি থেকে সরে আসলেও’ ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি থেকে সরেনি বাংলাদেশ। 

বেশকিছুদিন যাবত বাংলাদেশের বাজারে ডিমের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় এবার ডিমের দাম কমাতে ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৪০টি (১৩ হাজার ৯১০ কেজি) ডিম আমদানি করেছে সরকার। গত সোমবার বিকেলে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ডিমবোঝাই লরি বাংলাদেশে পৌঁছায়। এর আগে দেশের বাজারে প্রতিদিন ডিম কিনতে হতো ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। 

বিষয়টি নিয়েই সংবাদ প্রকাশ করেছে কলকতাল দৈনি আনন্দবাজার পত্রিকা; যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়া করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে। ‘সৌজন্যের ইলিশ’ আসা বন্ধ হলেও ‘দরকারি ডিম’ গেল বাংলাদেশে।'

বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যে মেতেছেন ফেসবুকররা। তৌসিফুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ❝রবিবারও বাংলাদেশে এক জোড়া মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। মঙ্গলবার সেটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা জোড়া।❞ জাইরা আখতার লিখেছেন, প্রতিবেশী দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতেই হবে এর কোন বিকল্প নেই আর। সবাইকে হিংসাত্মক কমেন্ট বন্ধ করা উচিৎ, অত্যন্ত দুঃখজনক এভাবে শান্তি আসতে পারে না।

মাহমুদু হাসান সজল লিখেছেন, আমাদের যেমন আপনাদের প্রয়োজন আছে ঠিক তেমনই আপনাদের ও আমাদের প্রয়োজন আছে, একে অপরকে আংগুল দেয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়!

কাস্টমস সূত্র জানায়, আমদানি করা এসব ডিমের মূল্য ১১ হাজার ২৭২ মার্কিন ডলার। প্রতি ডজন ডিমের আমদানি মূল্য শূন্য দশমিক ৫৬ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রতিটি ডিমের মূল্য পড়ে ৫ টাকা। প্রতি ডজন ডিমের ইনভয়েস মূল্যের ওপর ৩৩ শতাংশ সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে প্রতিটি ডিমের মূল্য দাঁড়ায় ৭ টাকা। তবে খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম কত বিক্রি করা হবে, তা এখনো জানা যায়নি।

ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হাইড্রো ল্যান্ড সলুশন ভারত থেকে এই ২ লাখ ৩১ হাজার পিস ডিম আমদানি করেছে। ডিমের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কলকাতার শ্রী লক্ষ্মী এন্টারপ্রাইজ।

আর বেনাপোল কাস্টমস হাউসে কাগজপত্র দাখিল করেছে সিএন্ডএফ এজেন্ট রাতুল এন্টারপ্রাইজ। তার মালিক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘‘ডিমের বাজারে অস্থিরতা দূর করার জন্য আরও বেশি ডিম আমদানি করতে হবে বাংলাদেশকে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি শুরুও হয়েছে। এই ভাবে ডিম আমদানি হলে বাংলাদেশের মানুষ আবার অল্পমূল্যে ডিম কিনতে পারবেন।’’ বেনাপোলের প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা বিনয়কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, সংশ্লিষ্ট আমদানিকারীদের কাগজপত্র পেয়েছেন। বেনাপোলে ডিমের গুণমান পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। তবে ভারতীয় শংসাপত্রের উপর ভিত্তি করে ওই পণ্যের ‘ক্লিয়ারেন্স’ দেওয়া হচ্ছে।

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা ভেঙে এ বার উৎসবের মরসুমে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, সিদ্ধান্তের কারণ অভ্যন্তরীণ চাহিদা। সেই অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ভারত থেকে তারা ডিম আমদানি করল। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ওথেলো চৌধুরী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ডিম আমদানির উপর ৩৩ শতাংশ কাস্টমসের ভ্যাট রয়েছে। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে ডিমগুলো বাজারে পাঠানো হয়েছে।’’

এদিকে, সারদীয় দুর্গাপূজার আগে ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতের বাজারে পৌঁছানোর পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে শুরু হওয়া এই ‘ইলিশ কূটনীতি’তে এবার ছেদ পড়েছে। এতে ভারতের ইলিশের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানায় দেশটির গণমাধ্যম।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, আমরা ইলিশ রপ্তানি করার অনুমতি দিতে পারি না, যখন আমাদের নিজেদের লোকজন এগুলো কিনতে পারে না। শেখ হাসিনা আমলে পূজার আগে পশ্চিমবঙ্গে টনকে টন পদ্মার ইলিশ গেলেও এবার আর যাচ্ছে না; তাই পূজার আগে ভারতের বাজারে ইলিশের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং এর জেরে দাম বাড়ছে।