যৌথ অভিযানে আটকের পর মৃত্যু ২ জনের
যৌথবাহিনীর অভিযানে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইউপি চেয়ারম্যানসহ তার পরিচিত পাঁচজনকে আটক করে। “এর পর আটককৃতদের মধ্যে দুইজন অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ও আপেল নামের দুইজনের মৃত্যু হয়। গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
আটকরা হলেন- সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন সুইট (৫০), তার ভাতিজা গোবিন্দী গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫), চেয়ারম্যানের গৃহকর্মী ও উত্তর সাথালিয়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫), চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেলের চালক ও ভরতখালী বাঁশহাটি এলাকার রিয়াজুল ইসলাম রকি (২৮) এবং চেয়ারম্যানের প্রতিবেশী শাহাদৎ হোসেন।
তাদের মধ্যে মৃত সোহরাব হোসেন আপেল গোবিন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকরি করতেন। তিনি গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে মারা যান এবং শফিকুল ইসলামকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুড়ে যাওয়া গাড়ি সরবে কবে?
আটক ও নিহতদের স্বজনরা বলছেন, যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে। এরপর তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে দাবি করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালায়, কিন্তু কোনো অস্ত্র পায়নি।
আটককৃত নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন, তাদের উপর নির্যাতন চালানো হলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলাম রকিকে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকি তিনজনকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।তাদের মধ্যে সোহরাব হোসেন আপেল গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে এবং শফিকুল ইসলাম বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউপি চেয়ারম্যান সুইট ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, রাত ১২টার দিকে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযানে আসে। তারা ঘরে ঢুকে স্ত্রী-ছেলেমেয়েকে একটি ঘরে রাখে। তার কাছে অস্ত্র আছে বলে সারা বাসায় তল্লাশি শুরু করে। “আমি তখন তাদের বলি, আমি তিনবারের চেয়ারম্যান। আমি এত খারাপ লোক না। যারা আপনাদের তথ্য দিয়েছে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। আপনার ভালো করে বাড়ি চেক করেন কিন্তু কিছুই পায়নি।”
চেয়ারম্যান বলেন, “রাত ১টা থেকে মাইর শুরু করছে ভোর ৬টা পর্যন্ত অমানবিক ভাবে মারধর করে। তারপর চারজনকে আমার জিম্মায় দিয়ে দেবে বলে সই নিল। এরপর বলল, তাদের কাছে অস্ত্র পাওয়া গেছে ছাড়ল না। সারারাত আমারে এভাবে মারবে। আমার যদি কোনো ত্রুটি থাকে আইন অনুযায়ী বিচার হবে।”
সোহরাবের স্ত্রী বিলাপ করে বলছিলেন, “রাতে আমার স্বামীকে আটক করতে আসে। আমি ঘরের দরজা খুলে দেই। বলে, আপনাদের ঘরে অস্ত্র আছে। আমি বলি, চাবি দিচ্ছি, সব ঘর সার্চ করেন। আমাদের ঘরে কোনো অস্ত্র নেই। বলে, না অস্ত্র আছে।” তিনি বলেন, “প্রশাসনের লোক হয়ে কেন আমার স্বামীকে হত্যা করল। আমি এর বিচার চাই। আমার স্বামী যদি কোনো অপরাধ করে থাকে আইনের ব্যবস্থা কেন নিল না? তারা হত্যা করল কেন? আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।”
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ছাড়াল ৪১ হাজার, নিখোঁজ ১০ হাজারের বেশি
সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিয়াদ আহম্মেদ বলেন, “যৌথ বাহিনীর হাতে আটক পাঁচজনকে মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কিন্তু এখানে তাদের সবার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া এবং গাইবান্ধায় স্থানান্তর করা হয়।”
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও মোহাম্মদ আসিফ বলেন, “সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার মধ্যে আপেলের শরীরে মারধরের আঘাতের চিহ্ন ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর পৌনে ১টার দিকে তিনি মারা যান।
“লাশের ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না।”
আরও পড়ুন: বিএসএফের গুলিতে নিহত স্কুলছাত্রের মরদেহ ফেরত ভারতের
ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহাবুব হোসেন বলেন, “অসুস্থ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে তিনজন ভর্তি হয়। ভর্তির পর থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও আপেল নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ও আহতদের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।” বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ রাতে বলেন, “গাইবান্ধার শফিকুল ইসলাম হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান।”
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ইবনে মিজান বলেন, “যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক দুইজন অসুস্থজনিত কারণে মারা যান।”