আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা ঢুকছে বাংলাদেশে
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ২০টি পয়েন্ট দিয়ে কৌশলে অনুপ্রবেশ করছেন রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের কারণে দালাল চক্রের হাতিয়ে নেওয়া জনপ্রতি ৫ থেকে ৮ হাজার টাকায় এপারে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন দখল নিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি। লড়াইয়ে আরও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী যুক্ত রয়েছে।
সূত্র বলছে, গত ছয় মাস যুদ্ধে আরাকান আর্মি দখল করেছে রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল, চৌকি এবং সেনা ও বিজিপির ক্যাম্প। তারই ধারাবাহিকতায় মংডু শহর দখল নিতে এখন তীব্র হামলা চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীও মংডু শহর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পালটা হামলা অব্যাহত রেখেছে। সংঘাতের জেরে মংডুসহ আশপাশের গ্রামে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি ঘটছে।
এ কারণে নতুন করে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নৌকা করে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে স্বীকার করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সীমান্তে নদী আর পাহাড় বড় একটা অংশ জুড়ে থাকায় ঠিক কোন জায়গা দিয়ে কখন তারা ঢুকে পড়ছে এটা বোঝা একটু মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের আধারে দালাল চক্রের মাধ্যমে এই কাজগুলো হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সংখ্যা আরও অনেক বাড়াতে। যৌথবাহিনীর সাহায্যে দালাল চক্র মোকাবেলারও চেষ্টা করা হচ্ছে। - ইউএনও, টেকনাফ
সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে সহায়তা করছে টেকনাফের স্থানীয় একটি দালাল চক্র। টেকনাফ সীমান্তের জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া ইত্যাদি পয়েন্ট দিয়ে সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে রোহিঙ্গাদের দেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছেে এ চক্রটি। রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পে পরিচিত আত্মীয়স্বজনদের কাছে কিংবা টেকনাফের বিভিন্ন ভাড়া বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করছে।
আরও পড়ুন: মণিপুরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মংডু শহরে চলতে থাকা সংঘাতের কারণে প্রচুর পরিমাণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। সীমান্তে নদী আর পাহাড় বড় একটা অংশ জুড়ে থাকায় ঠিক কোন জায়গা দিয়ে কখন তারা ঢুকে পড়ছে এটা বোঝা একটু মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের আধারে দালাল চক্রের মাধ্যমে এই কাজগুলো হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সংখ্যা আরও অনেক বাড়াতে। যৌথবাহিনীর সাহায্যে দালাল চক্র মোকাবেলারও চেষ্টা করা হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত পনেরো দিনে আনুমানিক ২ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। যাদের সংখ্যা ৬ হাজার বা, তারও বেশি হতে পারে। পালংখালী ইউনিয়নে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সংশ্লিষ্টরা আমাকে জানিয়েছেন ৩০০ থেকে ৫০০ রোহিঙ্গা এই ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছেন। স্থানীয় দালালচক্র রোহিঙ্গাদের এই সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের দ্রুত পুনর্বাসনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
মংডু থেকে দালালদের সহায়তায় টেকনাফে আসা রোহিঙ্গারা বলেন, রাখাইনে যুদ্ধ চলছে আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে। অথচ সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। গ্রামের অনেক রোহিঙ্গাকে তারা বিনা কারণে হত্যা করেছে। মর্টারশেল ও বিমান হামলা চালিয়ে অনেক গ্রাম তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাই রাখাইনে খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে নৌকা করে নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের বড়ইতলী দিয়ে রাতের আঁধারে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। এ কাজে স্থানীয় কিছু লোকজন জনপ্রতি ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা করে নিয়েছিল। মংডু থেকে পালিয়ে আসা আরেক রোহিঙ্গা সৈয়দ করিম বলেন, মংডুর গ্রামে যখন হামলা করেছে আরাকান আর্মি, তখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে এক সপ্তাহ সীমান্তের কাছে পাহাড়ে অবস্থান করেছি। আরো শত শত মানুষ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে ছিল। পরে দালালদের সহায়তায় নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের হ্নীলা দমদমিয়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছি। এখনো মিয়ানমারের সীমান্তে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা রয়েছে।