আন্দোলনে নিহতের ৩৬ দিন পর বাবা হলেন রুবেল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায়, গত ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বারে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রাজ্জাক রুবেল। রুবেল মারা যাওয়ার সময় সংসারে মা, মেয়ে ও তার স্ত্রী ছিলেন, তবে স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। সোমবার ১০ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন শহীদ রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার।
রুবেলের শ্যালক মো. সৈকত হোসেন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভাগনের জন্ম হয়েছে। আমার বোন ও ভাগনে সুস্থ আছেন। আমরা খুবই টেনশনে ছিলাম খরচ নিয়ে। কিন্তু স্থানীয় জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে সকল খরচ বহন করা হয়েছে।’
পড়ুন: ঢাকা ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবদুর রাজ্জাক রুবেল ছিলেন তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর রুবেলই পরিবারে হাল ধরেছিল। বিয়ে করেন হ্যাপী আক্তারকে। তাদের ৬ বছরের আরও একটি মেয়ে আছে। রুবেলকে হারিয়ে গত একমাস ধরে দুর্বিষহ জীবন পার করছে তার পরিবার। অবশেষে পুত্র সন্তানের জন্ম হওয়ায় পরিবারে আশার আলো জেগে ওঠে।
নিহত রুবেলের বৃদ্ধা মা হোসনেয়ারা বেগম নাতিকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে তিনি বলেন, ‘বাবারে আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হইতো। কপাল পোড়া নাতিটা জন্মের পর তার বাবার মুখ দেখতে পারল না। বড় হয়ে বাবাকে খুঁজলে আমি কী জবাব দেব?’
রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর ইচ্ছে ছিল ছেলে সন্তান হলে রাইয়ান নাম রাখবেন। নাম রাইয়ানই রাখা হয়েছে। আমার একটি সুখী পরিবার ছিল, একটি গুলিতে নিভে গেল সব। সন্তানের মুখ যেতে পারল না তার বাবা। আমার স্বামীর কি অপরাধ ছিল তাকে কেন ঘাতকরা গুলি করে মারল?’
রুবেলের স্ত্রীর সিজার অপারেশন ও ওষুধপত্রের যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী দেবিদ্বার উপজেলা শাখা। কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের জন্য শহীদ রুবেলের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তার আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বৈরাচারী হাসিনার পতন হয়েছে।
পড়ুনঃ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে 'ছাত্র-জনতা ঐক্যমঞ্চ'র আত্মপ্রকাশ
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী চেষ্টা করেছে শহীদ রুবেলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। এরই অংশ হিসেবে তার স্ত্রীর সিজার অপারেশন ও ওষুধপত্রের যাবতীয় খরচ বহন করেছে।’
আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট দেবিদ্বার উপজেলা সদরে ছাত্র জনতার ওপর আক্রমণ চালায় আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। সেসময় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসীরা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক রুবেলকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার করে। এ ঘটনায় পরিবার ও দলীয়ভাবে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। নিহত রুবেল দেবিদ্বার পৌরসভার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।