১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৬

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে চোখ নষ্ট ৪০১ জনের

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে চোখ নষ্ট ৪০১ জনের  © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ৬৪০ জন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছররা গুলিতে ৪০১ জনের চোখ নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন দুই চোখেরই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এক চোখ নষ্ট হয়েছে ৩৮২ জনের। এ ছাড়া ২ জনের দুই চোখে ও ৪২ জনের এক চোখে গুরুতর দৃষ্টিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১৭ জুলাই থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত চোখে আঘাত নিয়ে ৮৫৬ জন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁদের মধ্যে ৭১৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। চোখে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ৫২০ জনের।

গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টি হারানোদের মধ্যে ছয়জন শিক্ষার্থী। বাকিদের মধ্যে শ্রমিক, গাড়িচালক ও চাকরিজীবী দুজন করে ছয়জন। একজন শিক্ষক। অন্য ছয়জনের পেশাগত পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ৫৭৯ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ৫৫৮ জন পুরুষ ও ২১ জন নারী।

চোখে গুলি বা আঘাত নিয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের ১৫৯ জনই শিক্ষার্থী। এ ছাড়া চাকরিজীবী ৫৩ জন, শ্রমজীবী ৪৯ জন, ব্যবসায়ী ৩৫ জন, গাড়ি, রিকশা, ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ২৯ জন, দোকানদার ও দোকানকর্মী ১১ জন, গৃহিণী ৭ জন ও মেকানিক ৭ জন। এর বাইরে শিক্ষক ও পুলিশ দুজন করে চারজন এবং একজন চিকিৎসক। তবে ২২৪ জনের পেশা কী, তা জানা যায়নি।

এ আন্দোলনে পুলিশের ছররা বুলেটে এক চোখ হারিয়েছেন ঢাকা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান তুষার। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হন এই সাধারণ ছাত্র। কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশের অতর্কিত গুলি ভেদ করে বাম চোখের কর্নিয়া। তার মুখে ও বুকে ছররা বুলেট লাগে মোট ১০টি। তাকে বাঁচাতে আহত অবস্থায় তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের উদ্দেশে ছুটে চলে বন্ধুরা। পরপর ৫টি হাসপাতাল ঘুরেও মেলেনি এতো গুরুতর আহত রোগীর চিকিৎসা।

পরে রাজধানীর চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। চিকিৎসকরা জানান, তুষারের এক চোখের কর্নিয়া-রেটিনা নষ্ট হয়ে গেছে। জটিল অপারেশন। বুলেট এখনও ভেতরে রয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এখনও হয়নি অপারেশন। তবে এতেও যেন আক্ষেপ নেই এই শিক্ষার্থীর। দেশ স্বাধীনের স্বাদ গ্রহণে মত্য তুষার। সরকার পতনের পর গত (৫ আগস্ট) তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন অর্জনের বিজয়গাঁথা। 

আরও পড়ুন: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বেশি নিহত ঢাকায়, কম বরিশালে

এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি এগার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। চট্টগ্রামে আহতের সংখ্যা দুই হাজার। ঢাকা বিভাগে নিহতে সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ বিভাগে নিহত হয়েছেন ৪৭৭ জন। নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে কম বরিশালে একজন। আর চট্টগ্রাম ও খুলনায় নিহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৩ ও ৩৯ জন।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ও কমিটির প্রধান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বলেন, ‘নিহতের সংখ্যা আরো বাড়বে। কারণ সাভারে যারা মারা গিয়েছিল এবং যাদেরকে কোন কাগজ ছাড়া দাফন করা হয়েছিল, তাদেরকে রিপোর্টিংয়ের সুযোগ দিতে হবে। ফলে আরো বাড়বে নিহতের সংখ্যা। এ সংখ্যা আজকে ৬৪০ জন।’

এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। এ ২১ দিনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮১ জন মারা গেছেন। আন্দোলনে হতাহতদের পরিপূর্ণ তালিকা তৈরি করতে গত ১৫ অগাস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানান তিনি।