১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩

যেভাবে ফেরত আনা যাবে শেখ হাসিনাকে

শেখ হাসিন- নরেন্দ্র মোদি  © সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফেরত এনে একাধিক হত্যা মামলায় বিচার করার কথা বেশ জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মাদ ইউনূস, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আইসিটি’র নব-নিযুক্ত চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

জুলাই গণহত্যার শতাধিক হত্যা মামলার আসামী শেখ হাসিনাকে দেশের মাটিতে বিচারের প্রত্যাশা দেশটির সর্বস্তরের জনগনের।

রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অধিকাংশ মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। সুতরাং এ প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে তাকে আইনগতভাবেই বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করব,'। বাংলাদেশের সাথে ভারতের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি সম্পাদিত হয় ২০১৩ সালে—যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন।

তবে এই চুক্তির অধীনে শেখ হাসিনার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর প্রত্যর্পণ সম্ভব কি না, তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শুধুমাত্র আইনের ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের বিষয়টি বিবেচিত হলে ফলাফল যেমন অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে। তেমনি আইনের বাইরে রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা মিশে গেলে বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

২০১৩ সালের চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইলেই কি ভারত তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য, নাকি ভারত সরকার সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে। যদি তারা মনে করে তাঁকে যে অপরাধের কারণে ফেরত চাওয়া হচ্ছে সেগুলো রাজনৈতিক,' বলছেন দিল্লিভিত্তিক আইনজীবী উজ্জয়িনি চ্যাটার্জী।

তবে তিনি বলেন যে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত নেয়ার কথা-বার্তা হচ্ছে মারাত্মক সব অভিযোগে বিচারের জন্য, যেমন ব্যাপক হত্যাকাণ্ড। এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যর্পণ চুক্তিতে রাজনৈতিক অভিযোগ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

শেখ হাসিনা ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ অগাস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ধারনা করা হচ্ছে, তিনি দিল্লির কাছে নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন, তবে তার ব্যাপারে দীর্ঘ মেয়াদে ভারত সরকার কী করতে চায়, সেটা পরিষ্কার নয়।

হাসিনার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি মামলা করা হয়েছে যার বেশির ভাগ হত্যা মামলা। অন্তত ১১টি মামলা করা হয়েছে আইসিটিতে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩ সালের একটি আইনের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়েছিল। এই ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার করা।

বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের ২৫ মার্চ তিনজন বিচারক, সাতজন তদন্তকারী এবং ১২ জন প্রসিকিউটর নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।

আইসিটি’র নতুন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ‘আমার বাংলাদেশ’ বা এবি পার্টির একজন সিনিয়র নেতা। এবি পার্টি মূলত জামাতে ইসলামী দলের কয়েকজন সাবেক নেতার তৈরি।
ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী নেতাদের বিচারের সময় তাজুল ইসলাম অভিযুক্তদের পক্ষে কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেন।

প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া কী?
প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে চ্যাটার্জী বলেন, সাধারণত যে দেশ একজন 'আসামিকে' ফেরত চাইছে, তারা প্রথমে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ পাঠায়। মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে মূল কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে। তবে, একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নিয়োগ করা হতে পারে, তিনি বলেন। 'তারা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করবে এবং দেখবে কোনো প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায় কিনা,' তিনি বলেন।

'পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যর্পণ করা বা না করার বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নেবে কয়েকটি জিনিস বিবেচনা করে যেমন, ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্তের ফলাফল, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুসন্ধানের ফলাফল, অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য,' উজ্জয়িনি চ্যাটার্জী বলেন।

চুক্তির ৩১ নম্বর ধারায় প্রত্যর্পণ আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পক্ষে কারণগুলো বলা হয়েছে। যদি অভিযোগগুলো রাজনৈতিক হয়, তাহলে চুক্তির ৭ নম্বর ধারার অধীনে ম্যজিস্ট্রেট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন না। আর ২৯ নম্বর ধারার অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া আটকে দিতে পারে, যদি তারা মনে করে অভিযোগগুলো রাজনৈতিক।

তবে অপহরণ, বেআইনিভাবে আটক, সন্ত্রাস, হত্যা, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি অপরাধ 'রাজনৈতিক অপরাধ' হিসেবে গণ্য হবে না বলে চ্যাটার্জী জানিয়েছেন।

‘কাজেই, বাংলাদেশ যুক্তি দেখাতেই পারে যে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলো এই ছাড়ের মধ্যে পড়ে, অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো রাজনৈতিক নয়,' তিনি বলেন,তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেটের সুপারিশ হাইকোর্ট এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যাবে।